ওয়াকফ সম্পত্তি কার উপকারে? বিতর্কের মাঝেই ভিন্ন সুর তুলল উত্তরাখণ্ড, মুখ খুললেন বাংলা মুসলিম নেতারাও
২০২৫ সালের সংশোধিত ওয়াকফ আইন (Waqf Amendment Bill 2025) নিয়ে সারা দেশে যখন বিতর্ক, প্রতিবাদ ও রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে, তখন ভিন্ন সুরে গলা মিলিয়েছে উত্তরাখণ্ড ওয়াকফ বোর্ড। তারা সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়ে এই আইনের পক্ষে হস্তক্ষেপের অনুমতি চেয়েছে। অথচ এ রাজ্যের মুর্শিদাবাদে সেই আইন ঘিরে রক্তাক্ত বিক্ষোভে প্রাণ গেল অন্তত তিনজনের।
মুর্শিদাবাদে উত্তাল পরিস্থিতি, প্রশ্ন ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবহারে
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় নতুন ওয়াকফ আইন ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উত্তেজনা। রাজ্যজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ, জাতীয় সড়ক অবরোধ, পুলিশের গাড়ি পোড়ানো, এমনকি সাংসদের অফিসে হামলার মতো ঘটনা ঘটে। রাজ্য সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়েন করে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং সাময়িকভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়।
এই বিক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য সাংগঠনিক সম্পাদক মুখতার আলি। তাঁর সাফ বক্তব্য, “ওয়াকফ সম্পত্তি সাধারণ মুসলিমের কোনও কাজে লাগে না। এত বিপুল সম্পত্তি থেকেও রাজ্যে একটা স্কুল, কলেজ বা হাসপাতাল হয়নি। বরং প্রতিটি সরকারই ক্ষমতায় এসে নিজেদের লোকদের দিয়ে ওই সম্পত্তি ভোগ করিয়েছে।”
Image credit -Free Press Journal
৭০ শতাংশ ওয়াকফ সম্পত্তি বেদখল!
অল বেঙ্গল ইমাম-মুয়াজ্জিন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক নিজামুদ্দিন বিশ্বাস জানান, “রাজ্যজুড়ে ওয়াকফের অন্তত ১ লক্ষ একর জমি রয়েছে। এর ৭০ ভাগই বেদখল হয়ে গেছে।” তিনি জানান, “ওয়াকফ বোর্ডের হাতে প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। স্থানীয় থানা ও প্রশাসনের উপর নির্ভর করলেই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ঘটে এবং সম্পত্তি পুনরুদ্ধার অসম্ভব হয়ে পড়ে।”
রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা নিয়ে উঠছে অভিযোগ
মুর্শিদাবাদের কান্দির গোকর্ণ গ্রামের আবু তাহেরের ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করে রাখার অভিযোগ উঠেছে এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। লালবাগের নবাবি আমলের জমি নিয়েও রয়েছে দখলবাজির অভিযোগ। মাস চারেক আগে লালবাগে বোমা-গুলি চলেছিল ওই জমি ঘিরেই।
সর্বভারতীয় ইমাম-মুয়াজ্জিন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক জানান, “বাম আমলে ওয়াকফ বোর্ড কুক্ষিগত ছিল। তৃণমূল আমলে কিছুটা চিহ্নিতকরণ হচ্ছে ঠিকই, তবে তা অত্যন্ত ধীর গতিতে। ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্ধার করে স্কুল, কলেজ, হস্টেল নির্মাণ হওয়া উচিত।”
প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরীর দাবি, “সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করে রেখেছেন তৃণমূল নেতারাই।” যদিও তৃণমূল সাংসদ ও ওয়াকফ বোর্ডের সদস্য খলিলুর রহমান বলেন, “২০১১–র আগের মুতায়াল্লিরা দখল দিয়ে থাকলে সেটা অন্য বিষয়। তবে বর্তমানে শাসক দলের কেউ দখল করে আছেন, এমন নয়।”
উত্তরাখণ্ডে ভিন্ন সুর: 'দরিদ্র মুসলিমদের জন্য আশীর্বাদ'
এই বিতর্কের মাঝে উত্তরাখণ্ড ওয়াকফ বোর্ড জানায়, সংশোধিত আইন দরিদ্র মুসলিমদের জন্য ‘আশীর্বাদস্বরূপ’। বোর্ডের চেয়ারম্যান শাদাব শামস বলেন, “এই আইন ধনী মুসলিমদের দখলে থাকা সম্পত্তি মুক্ত করে প্রকৃত উপকারভোগীদের কাছে পৌঁছতে সাহায্য করবে।” উত্তরাখণ্ডে বর্তমানে ৫,৩১৭টি ওয়াকফ সম্পত্তির মধ্যে বহু জমি বেদখল রয়েছে বলে জানায় বোর্ড।
তাদের মতে, নতুন আইন ওয়াকফ বোর্ডে মুসলিম নারীদের অন্তর্ভুক্তি, সমস্ত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব, নিবন্ধন, নিরীক্ষা ও হিসাববদ্ধকরণে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ এবং ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিলের সুযোগ প্রদান করে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: কেন্দ্র বনাম রাজ্য
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অভিযোগ করেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশি পরিস্থিতি তৈরি করছেন।” পাল্টা মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই আইন রাজ্যে কার্যকর হবে না,” এবং শান্ত থাকার আহ্বান জানান।
যেখানে একদিকে সাধারণ মুসলিম নেতারা বলছেন, ওয়াকফ সম্পত্তির কোনও উপকার তারা পান না, অন্যদিকে উত্তরাখণ্ড ওয়াকফ বোর্ড মনে করে নতুন আইন দরিদ্র মুসলিমদের পক্ষে যাবে। এখন দেখার বিষয়, সুপ্রিম কোর্টের রায় এই বিতর্কের ভবিষ্যত কোন পথে নিয়ে যায়।
Tags - ওয়াকফ সম্পত্তি | ওয়াকফ আইন ২০২৫ | মুর্শিদাবাদ বিক্ষোভ | ওয়াকফ বোর্ড | মুখতার আলি | ওয়াকফ জমি দখল | শাদাব শামস | মুসলিম সম্পত্তি বিতর্ক | কেন্দ্র বনাম রাজ্য | ওয়াকফ আইনের বিপরীত মত