৭ বছরের অপেক্ষা, অসংখ্য বিনিদ্র রাতের পরিশ্রম – অবশেষে এক মেয়ের স্বপ্নের উড়ান"
UPSC CSE Results 2024: Shakti Dubey tops this year;
শক্তি দুবের অনুপ্রেরণামূলক কাহিনি
সকাল তখন ঠিক ছ’টা। গঙ্গার পবিত্র স্রোত বয়ে চলেছে যেমন তার চিরন্তন গতিতে, তেমনই প্রয়াগরাজ শহরের এক নির্জন কোণে এক তরুণী ধ্যানমগ্ন চোখে এক কাপ চা হাতে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। চোখে তখনও ঘুম নয়, বরং ভবিষ্যতের এক বিশাল ক্যানভাস—যার উপর তিনি বছরের পর বছর ধরে নিপুণভাবে রংতুলি চালিয়েছেন।
সেই তরুণীর নাম শক্তি দুবে। এবং আজ, ৭ বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর, তিনি শুধু সফল নন—তিনি সর্বভারতীয় ইউপিএসসি পরীক্ষার শীর্ষ স্থানাধিকারী (AIR 1)।
শুরুটা খুব সাধারণ—ঠিক যেমন হাজারো স্বপ্ন দেখা মেয়ের
শক্তি ছিলেন প্রয়াগরাজের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মানো মেয়ে। এক আদর্শ ভারতীয় শহরের মতো, প্রয়াগরাজও তার সন্তানদের শৈশবে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তোলে। শক্তির বাবামা দুজনেই চেয়েছিলেন, তাঁদের মেয়ে যেন শিক্ষিত, আত্মনির্ভর এবং চরিত্রে অটল হয়।
বাড়ির ছোট্ট ঘরটা ছিল তাঁর প্রথম পাঠশালা। খাতা-কলমের পাশে বাবার পরামর্শ, মায়ের আদর আর শত শত বইয়ের গন্ধ—এই নিয়েই গড়ে উঠেছিল তাঁর ছোটবেলার পৃথিবী।
বিদ্যালয়ে তিনি সবসময়ই ছিলেন মেধাবী। অন্যেরা যখন টিউশন বা কোচিংয়ের চিন্তায় ব্যস্ত, তখন শক্তি সন্ধ্যায় গঙ্গার ধারে বসে দেশ-বিদেশের রাজনীতি আর সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ভাবতেন। তাঁর চোখে তখন থেকেই ফুটে উঠত এক প্রশাসকের স্বপ্ন, এক জনদরদী নেত্রী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা।
#WATCH | Delhi: Shakti Dubey secures 1st rank in the UPSC Civil Services Examination.
— ANI (@ANI) April 22, 2025
She says, "I worked hard for many years. I told everyone at home they are all very happy. It was hard to believe at first, but the feeling is slowly sinking in... My brother had predicted I… pic.twitter.com/h1tKm1JzLi
BHU-র দিনগুলি—যেখানে স্বপ্ন পেল নতুন রূপ
২০১৬ সালে স্নাতক শেষ করে শক্তি ভর্তি হন বারাণসীর বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে (BHU)। জৈব রসায়নে স্নাতকোত্তর করতে করতে তাঁর মন আরও দৃঢ় হয়—এই জ্ঞান শুধু নিজের জন্য নয়, ব্যবহার হবে মানুষের জন্য।
BHU-র দিনগুলোই তাঁকে শিখিয়েছিল, নেতৃত্ব কাকে বলে, কীভাবে একজন নারীও সমাজের চাকা ঘোরাতে পারে শুধুমাত্র মেধা, নীতি ও আত্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন—তিনি হবেন একজন আইএএস অফিসার।
#WATCH | Prayagraj, UP: Shakti Dubey secures 1st rank in the UPSC Civil Services Examination.
— ANI (@ANI) April 22, 2025
Her mother Prema Dubey says, "I am very happy but she has been able to achieve this rank because of the blessings of Mahadev. I had no role to play. She studied day and night. She is in… pic.twitter.com/gdEpvzxOFb
শুরু হয় এক কঠিন, নিঃসঙ্গ লড়াই
২০১৮ সাল। পেছনে ফেলে এলেন ছাত্রজীবন, পড়ানোর চাকরি। শুরু হল কঠিন সংগ্রামের অধ্যায়—UPSC সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি।
এই পরীক্ষাটা শুধু পঠনপাঠনের নয়। এটি মানসিক দৃঢ়তার, আত্মবিশ্বাসের, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখার পরীক্ষাও। প্রতিদিনের পড়া, নোট লেখা, রিভিশন, অনুশীলন—এ যেন ছিল এক নিরব যুদ্ধ।
#WATCH | Prayagraj, UP: Shakti Dubey secures 1st rank in the UPSC Civil Services Examination.
— ANI (@ANI) April 22, 2025
Her father, Devendra Kumar Dubey says, "I am very happy. The only role I played in her studies was to make available anything and everything she needed. The rest was her hard work and… pic.twitter.com/kvi75pGEf7
একসময় ক্লান্তি এসেছে, বন্ধুদের বিয়ে বা চাকরির খবরে মন কেঁদেছে, আত্মীয়দের মন্তব্যে চোখে জল এসেছে। কিন্তু শক্তি থেমে যাননি। তিনি জানতেন, এই পথ তাঁর, এই লড়াই শুধু নিজের জন্য নয়—তাঁর মতো লক্ষ লক্ষ মেয়ের স্বপ্নের প্রতীক হয়ে ওঠার জন্য।
বিজ্ঞান পটভূমি থাকা আরও এক চ্যালেঞ্জ—রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
পরীক্ষায় তাঁর ঐচ্ছিক বিষয় ছিল রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। বিজ্ঞানপটভূমি থাকা সত্ত্বেও তিনি এই বিষয়ের গভীরে ঢুকেছিলেন। কারণ, এক জন সিভিল সার্ভেন্টকে শুধু বই মুখস্থ করলেই হয় না—চাই দেশ ও সমাজের প্রতিটি স্তরের স্পষ্ট ধারণা।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলি, সংবিধান, অর্থনীতি—সব কিছুর প্রতি ছিল তাঁর চুলচেরা নজর। আর ছিল এক নিয়মিত রুটিন, যেখানে ঘড়ির কাঁটা মতো চলত দিনরাতের পড়াশোনা।
২০২৪-এর পরীক্ষার প্রতিটি ধাপেই জ্বলজ্বলে সফলতা
২০২৪ সালের জুন মাসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বসেন শক্তি। তারপর সেপ্টেম্বরের মেইন পরীক্ষা, আর শেষপর্যন্ত জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে চলে ভাইভা। প্রতিটি ধাপে তিনি নিজেকে নিখুঁতভাবে প্রস্তুত রেখেছিলেন।
আর অবশেষে এপ্রিল ১৬ তারিখে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যখন ফলাফল প্রকাশিত হল এবং দেখা গেল—‘AIR 1: Shakti Dubey’।
সাফল্যের মুহূর্তে চোখে জল, ঠোঁটে হাসি
ফলাফল দেখেই কেঁদে ফেলেছিলেন শক্তি। মা তখন পাশে ছিলেন। বাবার গলা ধরে এসেছিল, “আমার মেয়েটা পেরেছে।” সেই কান্নায় ছিল তৃপ্তি, ছিল বুকভরা গর্ব।
তিনি জানতেন, তাঁর এই অর্জন শুধু একটি পদ নয়—এটা এক প্রতীক, এক বার্তা। “হ্যাঁ, মেয়েরাও পারে। মেয়েরাও শীর্ষে পৌঁছতে পারে, যদি সুযোগ আর পরিশ্রম একসাথে থাকে।”
প্রেরণা হয়ে উঠেছেন হাজারো ছাত্রীদের জন্য
আজ শক্তি দুবে শুধুই একজন টপার নন। তিনি হয়ে উঠেছেন দেশের প্রতিটি কোণার ছাত্রীদের স্বপ্নের উৎস। যাঁরা মনে করেন, হয়তো তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়—তাঁদের জন্যই শক্তির জীবনটা এক জীবন্ত উদাহরণ।
শক্তির মতে,
“পরিশ্রম কখনও বিফলে যায় না। স্বপ্ন যদি বড় হয়, তাহলে প্রস্তুতিটাও হতে হবে হৃদয় দিয়ে। আমি পেরেছি কারণ আমি হাল ছাড়িনি।”
শক্তি দুবের এই অনবদ্য যাত্রা এক গল্প নয়—এটা এক প্রমাণ, যে সত্যিকারের আত্মবিশ্বাস, অধ্যবসায় আর সততা থাকলে, একজন তরুণীও দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে পৌঁছাতে পারে।
তাঁর কাহিনি শুধু আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা নয়, বরং এক সাহস, এক বিশ্বাস, যে মেয়েরা পারে… এবং বার বার প্রমাণ করে দেয়—তারা শুধু পেছনে পড়ে থাকা নয়, বরং সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।