ওয়াকফ নিয়ে এবার ময়দানে নওশাদের আইএসএফ : উত্তপ্ত ভাঙড় , কলকাতায় মহামিছিলের ডাক
কলকাতা: ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে আজ সোমবার শিয়ালদা থেকে ধর্মতলার বি. আর. অম্বেদকরের মূর্তির দিকে আইএসএফ (ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট)-এর ডাকা মহামিছিল ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে শহরের প্রাণকেন্দ্র। অনুমতি না থাকায় মিছিল আটকে দেয় পুলিশ, সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিয়ালদা স্টেশন চত্বরে সৃষ্টি হয় চরম উত্তেজনার।
#WATCH | Sealdah, West Bengal: Members and supporters of Indian Secular Front (ISF) protest in Sealdah demanding repeal of the Waqf Amendment Act pic.twitter.com/AbPWyb8tVq
— ANI (@ANI) April 14, 2025
আইএসএফ সমর্থকরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করেন। পুলিশের বাধায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে উত্তেজনা ছড়ায় পুরো এলাকা জুড়ে। মিছিলের নেতৃত্বে থাকা বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি নিজে উপস্থিত হন শিয়ালদায়। তিনি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ডাক দিয়ে জানান, “এই মিছিল কোনও দলীয় পতাকার নয়, এটি একটি জাতীয় ইস্যু। তাই শুধুমাত্র ভারতের জাতীয় পতাকাই থাকবে এই প্রতিবাদ মিছিলে।”

তাঁর এই বার্তায় শান্তির বার্তা পেলেও, পুলিশের সঙ্গে সমর্থকদের ধাক্কাধাক্কিতে পরিস্থিতি কিছু সময়ের জন্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। শিয়ালদা স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় যানজটেরও সৃষ্টি হয়।
Protests against the Waqf Act spread to Bhangar, blocking Basanti Highway after police stopped demonstrators from marching to Ramlila Maidan, citing lack of permission. Tensions rose, with ISF’s #NaushadSiddiqui accusing police of creating unrest for political motives. pic.twitter.com/vgcvbmBzfu
— Taaza TV (@taazatv) April 14, 2025
Protests against the Waqf Act spread to Bhangar, blocking Basanti Highway after police stopped demonstrators from marching to Ramlila Maidan, citing lack of permission. Tensions rose, with ISF’s #NaushadSiddiqui accusing police of creating unrest for political motives. pic.twitter.com/vgcvbmBzfu
— Taaza TV (@taazatv) April 14, 2025ভাঙড়েও উত্তপ্ত পরিস্থিতি
ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের অন্যত্রও। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে বাসন্তী হাইওয়েতে আইএসএফ সমর্থকদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিবাদ বাঁধে। লেদার কমপ্লেক্স থানার পুলিশ বিক্ষোভকারীদের গাড়ি আটকে দেয়, যার ফলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি, আহত হন বেশ কয়েকজন। বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় বসে পড়লে বাসন্তী হাইওয়েতে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।
রাজনীতি শুরু কেন্দ্র-রাজ্যের
ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে এই বিক্ষোভ-অশান্তির আবহে শুরু হয়েছে কড়া রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপি নেতারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন। পাল্টা বিজেপিকে "ভেদাভেদের রাজনীতি"র দায়ে অভিযুক্ত করেছে তৃণমূল। একই দিনে মুখ্যমন্ত্রী ইমাম-মোয়াজ্জেমদের একটি সভায় অংশগ্রহণ করতে চলেছেন, যেখানে বিজেপির পক্ষ থেকে ওই দিনকেই “হিন্দু শহিদ দিবস” পালনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
এএফএসপিএ (AFSPA) দাবি বিজেপির; শান্তির আবেদন ‘মানুষের ভাষা’র

মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক সহিংসতার পর রাজ্য রাজনীতিতে এক নতুন মোড় এসেছে। বিজেপির দুই সংসদ সদস্য জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো ও জগন্নাথ সরকার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে দাবি করেছেন, মুর্শিদাবাদ, মালদা, নদিয়া এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাকে 'বিরক্ত এলাকা' হিসেবে ঘোষণা করে এএফএসপিএ (AFSPA) প্রয়োগ করা হোক। এর তীব্র বিরোধিতা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস, দাবি করেছে এটি অসাংবিধানিক। আর এই উত্তেজনার আবহেই এবার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকিও।
বিজেপি নেতারা অভিযোগ করছেন, ওই জেলাগুলিতে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর বারবার হামলার ঘটনা ঘটছে এবং রাজ্য প্রশাসন তা উপেক্ষা করছে। অন্যদিকে, তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পাল্টা দাবি করে বলেন, “এই সহিংসতার পিছনে সীমান্ত পারাপারের যোগসাজশ রয়েছে। কিছু বহিরাগত মুখ দেখা গেছে, যাদের স্থানীয়রা চিনতেই পারেননি। এই ষড়যন্ত্র অনেক গভীরে প্রোথিত।”
তিনি আরও বলেন, “ওয়াকফ বিলকে কেন্দ্র করে ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রতিবাদ হোক, তবে তা হোক শান্তিপূর্ণ ও সাংবিধানিক পথে, বিজেপির ফাঁদে পা না দিয়ে।”
বিজেপির পক্ষ থেকে জোর দাবি
বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর চিঠিতে বলা হয়েছে, “তৃণমূলের তোষণনীতির জেরে হিন্দুদের উপর আক্রমণ ঘটছে, আর প্রশাসন নিরব। তাই কেন্দ্রকে হস্তক্ষেপ করতে হবে।” একইসঙ্গে সাংসদ জগন্নাথ সরকারের অভিযোগ, “যখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল, তখনও রাজ্য সরকার নিশ্চুপ ছিল।”
কলকাতা হাইকোর্টের একটি বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চও মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক অশান্তি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকারের উদ্যোগকে “অপর্যাপ্ত” বলে পর্যবেক্ষণ করেছে।
নওশাদ সিদ্দিকির আইএসএফ কী বলছে?
অন্যদিকে, রাজ্যের বিরোধী রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে উঠে আসছে আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকির নাম। তিনি এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন এবং ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। সূত্রের খবর, তিনি খুব শীঘ্রই মুর্শিদাবাদ পরিদর্শন করতে পারেন।
শান্তির পথে হাঁটুন – "মানুষের ভাষা"র আবেদন
এমন সময়ে, ‘মানুষের ভাষা’ ব্লগের পক্ষ থেকে আমরা কঠোরভাবে নিন্দা জানাই যেকোনও ধরনের হিংসাত্মক প্রতিবাদের, যা মানুষের জীবন, সম্পদ এবং সামাজিক সম্প্রীতিকে নষ্ট করে। আমাদের আবেদন, প্রতিবাদ হোক – কিন্তু তা হোক আইনের পথে, শান্তির পথে, মানবতার পথে।
রাজনীতি মতাদর্শগত হতে পারে, কিন্তু সহিংসতা কখনোই সমাধান নয়। মুর্শিদাবাদ, বাংলা, কিংবা ভারতের কোথাও – আতঙ্ক আর বিভাজনের নয়, শান্তি ও সংহতির বার্তাই ছড়াক।