India vs Pakistan War :ভারত পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিতে প্রস্তুত! পহেলগাঁও হামলার পর বহু-মুখী পাল্টা পদক্ষেপ
প্রবীর রায় চৌধুরী |
পহেলগাঁওর শান্ত সবুজ উপত্যকায় রক্তাক্ত সন্ত্রাস! ২৮ নিরপরাধ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া এই বর্বরোচিত হামলার পর পাকিস্তানের প্রতি ভারতের কড়া বার্তা—সন্ত্রাসের মদতদাতাদের আর ছাড় নয়। কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে শুরু করে সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত এবং গোপন সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা—বহু-মুখী প্রতিরোধের রূপরেখা তৈরি করছে নয়াদিল্লি।
কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন
ভারত প্রথম ধাক্কা দিয়েছে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানি হাইকমিশনের কিছু কর্মীকে, যারা সন্দেহভাজন গোয়েন্দা কার্যকলাপে যুক্ত, তাদের বহিষ্কারের পরিকল্পনা চূড়ান্ত। একইসঙ্গে পাকিস্তান হাইকমিশনের জমি ফেরত নেওয়ার কথাও বিবেচনা করছে সরকার, যা প্রতীকীভাবে সম্পর্কের সম্পূর্ণ ভাঙনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এছাড়া, ভারত নিজেও ইসলামাবাদ থেকে কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করে নিতে পারে এবং অবশিষ্ট যোগাযোগ কেবল সরকারি ইমেইলের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ করার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে কার্যত দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সংলাপ সম্পূর্ণ হিমায়িত হয়ে যাবে।
সিন্ধু জলচুক্তি: পাকিস্তানের 'জাগুলার ভেইন'-এ আঘাত
১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু জলচুক্তি এতদিন দুই দেশের মধ্যে বিরল সহযোগিতার নিদর্শন ছিল—even during wars. চুক্তি অনুযায়ী:
- রবি, বেয়াস ও শতদ্রু নদীর জল ব্যবহারের অধিকার ছিল ভারতের
- সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ছিল
ভারত যদিও পশ্চিম নদীগুলোর জল সম্পূর্ণ ব্যবহার করতে পারে না, তবু জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেচে ব্যবহারের অধিকার রয়েছে। পাকিস্তানের খাদ্য নিরাপত্তা এবং পানীয় জলের প্রধান উৎস এই নদীগুলোই। ভারত সরকার এখন এই চুক্তি পুরোপুরি স্থগিত করার ভাবনায়—পহেলগাঁও হামলার পরিপ্রেক্ষিতে, যা ‘চুক্তির শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মূল নীতির লঙ্ঘন’ বলে দাবি করছে নয়াদিল্লি।
চুক্তির ধারা XII অনুযায়ী, ‘গুরুতর লঙ্ঘনের’ ভিত্তিতে যেকোনো পক্ষ এটি বাতিল করতে পারে—ভারতের মতে এই হামলা সেই লঙ্ঘনেরই এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। শুধু এই চুক্তি বাতিলের ফলেই পাকিস্তানের কৃষি ও অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।
আন্তর্জাতিক কূটনীতি: ‘নেইম অ্যান্ড শেম’ স্ট্র্যাটেজি
ভারত এবার সরাসরি বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে চিহ্নিত করতে চলেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের পহেলগাঁওর হামলার স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে—যেখানে তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করবেন। এই দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে পাকিস্তানপন্থী লস্কর-ই-তৈবা এবং অনুরূপ সংগঠনের প্রকৃত চেহারা বিশ্বের সামনে উন্মোচিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
জনগণের স্তরে সংযোগ ছিন্নের পথে : ভিসা প্রদান সম্পূর্ণ বন্ধ
ভারত পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রদান সম্পূর্ণ বন্ধ করতে পারে এবং ভারতীয়দের পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এনওসি বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। এমনকি কারতারপুর করিডর—যা সিক्ख তীর্থযাত্রীদের জন্য খোলা হয়েছিল—তাও বন্ধ করার কথা ভাবছে সরকার।
সীমান্ত বাণিজ্য ও অনুষ্ঠান বন্ধের প্রস্তুতি
পাকিস্তানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা তৃতীয় দেশের মাধ্যমে পরোক্ষ বাণিজ্য বন্ধ করার চিন্তা করছে ভারত। একইসঙ্গে ওয়াঘা সীমান্তের ফ্ল্যাগ রিট্রিট অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য সীমান্তবর্তী কূটনৈতিক রীতিনীতি স্থগিত করা হতে পারে। এর মাধ্যমে স্পষ্ট বার্তা যাবে—সন্ত্রাসে মদতদাতা কোনো দেশের সঙ্গে ভারত সম্পর্ক রাখবে না।
শক্তিশালী সামরিক প্রতিশোধ
সরকার এখনো সামরিক পদক্ষেপের বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেনি। তবে সূত্রের দাবি—পাকিস্তান সেনার ঘাঁটি এবং লস্কর-ই-তৈবা সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসী লঞ্চপ্যাডগুলিতে নির্দিষ্ট ও গোপন হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত। এই অভিযান প্রতিশোধ ও ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা—উভয় দৃষ্টিকোণেই গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের বার্তা স্পষ্ট: চুপ থাকা নয়, উচিত শিক্ষা দেবে ভারত
পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের প্রতিক্রিয়া শুধু প্রতিশোধ নয়, এটি বিশ্বকে জানান দেওয়া—সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নীরব থাকা মানেই তা প্রশ্রয় দেওয়া। পাকিস্তান যদি ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ রপ্তানি করে, তবে ভারত তার দাঁতভাঙা জবাব দেবে—সাংবিধানিক, কূটনৈতিক এবং প্রয়োজনে সামরিকভাবে।
এখন সময় এসেছে, বিশ্ব বুঝুক—পাকিস্তান কেবল ভারতের সমস্যা নয়, এটি এক ‘বিশ্ব সন্ত্রাস হাব’। পহেলগাঁও হামলা হতে পারে সেই মোড়, যেখান থেকে ফিরতি পথ নেই।