২২ তারিখে DA মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে: রাজ্য সরকারের উপর চাপ, মুখ খুললেন শুভেন্দু অধিকারী
মানুষের ভাষা ডেস্ক | ১৯ এপ্রিল ২০২৫
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মীদের বহু প্রতীক্ষিত ডিএ (মহার্ঘ ভাতা) মামলার শুনানি আসন্ন সোমবার, অর্থাৎ ২২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে উঠতে চলেছে। ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের কজলিস্টে মামলাটি ৫১ নম্বরে তালিকাভুক্ত হয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
এই মামলার শুনানি হবে বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি সঞ্জয় কারোল এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার ডিভিশন বেঞ্চে। এদিন বিচারপতি কারোলের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ দুপুর ২টো থেকে ১০ নম্বর কোর্টে বসবেন, সেই হিসেবে প্রথমার্ধেই ডিএ মামলাটি উঠতে পারে বলে অনুমান।
১৫ বার মামলার শুনানি পিছিয়েছে
এই মামলার পেছনে রয়েছে বছরের পর বছর ধরে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একটানা আন্দোলন ও আইনগত লড়াই। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীরা যেখানে পূর্ণ ডিএ পান, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার কর্মীদের কেন্দ্রের তুলনায় অনেক কম হারে মহার্ঘ ভাতা প্রদান করে আসছে।
২০২৩ সালের হাইকোর্টের রায়ে রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে, যার জেরে প্রায় ১৫ বার মামলার শুনানি পিছিয়েছে। প্রতিবারই রাজ্য সরকার সময় চেয়ে নানান অজুহাত দিয়েছে বলে অভিযোগ কর্মচারীদের সংগঠনের।
সরকারি কর্মচারীদের অবস্থান:
কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ-এর সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “আমরা আশাবাদী এবার অন্তত চূড়ান্ত রায় আসবে। আমাদের আশা, আদালত ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত নেবে।”
এছাড়াও সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের অন্যতম নেতা ভাস্কর ঘোষ ফেসবুকে জানিয়েছেন, “এবারের শুনানিতে আমাদের হয়ে একজন বিশিষ্ট আইনজীবী লড়বেন। যদি তাঁর আন্তর্জাতিক মামলার ব্যস্ততা না থাকে, তিনি এই মামলায় অংশ নেবেন।”
বিজেপির সক্রিয় ভূমিকা ও শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য:
এই ইস্যুতে শুরু থেকেই তীব্র কণ্ঠে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন বিজেপি বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সম্প্রতি নিজের ফেসবুক পেজে তিনি লেখেন:
"DA-র জন্য রাজ্যের কর্মচারীরা যেভাবে লড়াই করছেন, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই সরকার কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা দিতে অস্বীকার করছে। আগামী ২২ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় রাজ্যের প্রশাসনের আসল চরিত্র উন্মোচন করবে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা বিজেপি-র পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছি। কর্মচারীদের পাশে আছি, থাকব।"
When the State Govt decided to raise the Salaries of the MLAs, I had objected, but couldn't stop the Govt as they had the numbers.
— Suvendu Adhikari (@SuvenduWB) June 28, 2024
I had promised that I will be donating the excess amount which would be used for legal expenses of the State Govt Employees for the DA Case which is… pic.twitter.com/7VgRCpCkKf
রাজ্য সরকারের চাপ ও প্রতিক্রিয়া:
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য না এলেও প্রশাসনিক মহলে চাপের ছাপ স্পষ্ট। আদালতে দফায় দফায় শুনানির পিছনে সময় চাওয়া এবং আইনি তৎপরতায় বিলম্ব রাজ্যের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, আদালতের রায় যদি কর্মীদের পক্ষে যায়, তবে সরকারের আর্থিক অবস্থার উপরও প্রভাব পড়বে।
২২ এপ্রিলের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন লক্ষাধিক রাজ্য সরকারি কর্মচারী। এবার হয়তো সেই বহু প্রতীক্ষিত সিদ্ধান্তের দিকেই এগোচ্ছে ইতিহাস। দেখা যাক, সুপ্রিম কোর্টের রায় শেষ পর্যন্ত কোন পথে মোড় নেয় – কর্মচারীদের আশার আলো, নাকি রাজ্য সরকারের দীর্ঘ আইনি কৌশলের এক নতুন অধ্যায়?