বিভ্রান্তির ব্রিগেডে বামেরা - "আহঃ ওসব তোমরা বুঝবে না..... "
সম্পাদকীয়
প্রবীর রায় চৌধুরী :-
বছরের পর বছর ধরে যারা নিজেদের প্রধান শত্রু কে সেটাই ঠিক করতে পারেনি আজ তাদেরই ব্রিগেড সমাবেশ. অর্থাৎ সিপিআইএম. এনারাই সারা ভারতের সর্বজন গ্রাহ্য নেতা প্রয়াত জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী হতে দেননি, এনারাই সর্বজন শ্রদ্ধেয় তৎকালীন লোকসভা স্পিকার প্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় কে দল থেকেই বহিষ্কার করে দিয়েছিলে, এনারাই পুঁজিবাদী, বুর্জোয়া ইত্যাদি চিরাচরিত স্লোগান তুলে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াইতে মত্ত থেকেছেন- দু তরফেই রক্ত ঝরেছে প্রচুর। আবার ক্ষমতা হারিয়ে উদ্ভ্রান্ত বা বিভ্রান্ত হয়ে ইদানিং সেই অচ্ছুত কংগ্রেসের সাথেই হাত মিলিয়ে মিছিলে হাঁটেন। এনারাই ভোট লুট বা রিগিংকে প্রায় অপ্রতিরোধ্য শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছিলেন। এদের আমলেই এরা শিখিয়েছেন কিভাবে পার্টি অফিস থেকে রাজ্য শাসন করতে হয়, এরাই শিখিয়েছেন কিভাবে পুলিশকে পার্টি কর্মীতে পরিণত করতে হয়। এনাদের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তার আগের মন্ত্রী সভাকে চোরেদের মন্ত্রিসভা বলেছিলেন বলে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
এদের কাছে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ, মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেব, ভগবান শ্রী রামচন্দ্র সহ এই পুণ্য ভারত ভূমির সব মনীষীরাই ফালতু- এইসব মনীষীরা সাম্যবাদী নন। একমাত্র মার্কস লেলিন ই সাম্যবাদ সৃষ্টি করেছেন, বাকি দুনিয়া অসাম্য শিখিয়েছে। লেলিন- মার্কসের ছবি ঘরে টাঙ্গিয়ে পুজো করলে দোষ নেই। হিন্দু দেব দেবীর পূজাতে এনাদের জাত চলে যায়। তোষণের রাজনীতির এরাই জনক। হিন্দুদের সব খারাপ আর অন্য একটি সম্প্রদায়ের সব ভালো - এই অভ্যাস, এই পাটিগণিত এরাই তৈরি করে দিয়েছেন। প্রাথমিকে ইংরাজি উঠিয়ে দিয়ে বঙ্গের শিক্ষার প্রথম বারোটা এরাই বাজিয়েছিলেন। মমতা ব্যানার্জি যদি বলেন যে তখন চিরকুটে চাকরি হতো , সেটা ভুল তো কিছু বলেন না। প্রমান চাই ? কোর্টে প্রমানের চেষ্টা বর্তমান শাসক করেনি। মানুষের আদালতে তার বিচার এরা পেয়ে গেছেন।
অথচ দেখুন , আজ আবার এরা শত্রু খুঁজতে ব্রিগেডে জমা হচ্ছেন। কেন ? নিজেরাই ঠিকঠাক জানেনা। ক্রমাগত দ্বিচারিতা আর স্ববিরোধী অবস্থান এদের প্রায় আণুবীক্ষণিক বিন্দুতে পরিণত করেছে। বারে বারে এনারা প্রচুর দাঁড়ি চুলকিয়ে এক একটি রাজনৈতিক পার্টি লাইন ঠিক করেন এবং কিছুদিন পর যার পর নাই পর্যুদস্ত হয়ে বিবৃতি দেন, "ওটা আমাদের ভুল হয়ে গেছিল।" নিজ দেশ মাতৃকা এদের কাছে প্রিয় নয়, তার থেকে বরং চীন এদের বেশি আপন। রবীন্দ্রনাথ এদের কাছে বুর্জোয়া কবি, নেতাজী সুভাষ চন্দ্রকে এরা বলেছিলেন তোজোর ( তৎকালীন জাপানের প্রধানমন্ত্রী) কুকুর। এনাদের নেতা মন্ত্রীরা "ওটা আমাদের ভুল হয়ে গেছিল" বলে পার পেয়ে গেছেন বহালতবিয়াতে। আর সেই ভুলের অভিশাপে ধ্বংস হয়ে গেছে কয়েক প্রজন্মের বাঙালি সমাজ।
যে তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে লড়াইতে নাকানি চোবানি খেয়ে এরা হেরেছিলেন, বৃহত্তর স্বার্থে নাকি সেই তৃণমূলের সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়ে নিতে এদের লজ্জা করে না। ওটা নাকি কেন্দ্রের ব্যাপার ; আর রাজ্যে যখন প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিজেপি শাসক তৃণমূলকে বারবার কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে, তখন এদের ভোট ভাগের রাজনীতি ভোটের ময়দানে শাসকের কাছে মেঘ না চাইতেই জলের মত হয়ে দাড়াচ্ছে।
প্রশ্ন করুন এটা কেমন হলো ? এরা উত্তর দেবে গম্ভীর ভাবে - "ওটা এখন তোমরা বুঝবে না" ; সত্যিই তো দুর্বোধ্য জিনিস কেই বা বোঝে বলুন ? তাহলে কি দাঁড়ালো ? বিরোধী ভোটে , যার বেশিরভাগটাই হিন্দু ভোট, তাতে ভাগ বসিয়ে তৃণমূলের জেতার পথ মসৃন করাই এখন বামেদের লক্ষ্য নয় কি ? তাতে অন্তত এরকম ব্রিগেড , আর যাদবপুরে আজাদী আজাদী করলে শাসক রাগ করবে না। গত দুটো লোকসভা , বিধানসভা , পঞ্চায়েত , পৌরসভা - সব ভোটেই একই পাটিগণিত চলছে তো ।তাই মুক্ষু সুখ্খু মানুষ একটু অংক কোষে দেখছে আরকি।
পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে , যে রাজীব গান্ধীর কালো হাত এরা ভেঙে গুড়িয়ে দেবেন বলতেন , যে ইন্দিরা কংগ্রেসের ঘোষণা করা ইমার্জেন্সি ধ্বংস করে দিয়েছে এদেরই বহু শ্রদ্ধেয় কমরেডের জীবন ,শুধুমাত্র বিজেপিকে আটকাতে হবে বলে ( কারণটা এখন বুঝে উঠতে পারেনা ) সেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে বন্ধুত্ব করতে এদের আটকে না। এরা সেইসব কমরেডদের আত্মবলিদান এতো সহজে ভুলে গেলো ? শুধু বিজেপিকে আটকাতে হবে তাই কেন্দ্রে তৃণমূলও এদের ইন্ডীর বন্ধু। মানে টা কি ? কাঁঠালের আমসত্ব হয় ? হ্যাঁ হয়। এরাই প্রমান করেন বারবার , যে সেটা হয়। এরপর যখন ের বলবেন " ওটা আমাদের ভুল হয়ে গেছিলো " ততদিনে এই অভাগা বঙ্গের গঙ্গা দিয়ে বয়ে যাবে অনেক জল। তাই , এতো কথা।
তাহলে ? যুক্তির খাতিরে একদিনের চরম শত্রুরা যদি এখন এতো প্রিয় বন্ধু হয়ে যেতে পারে , সেক্ষেত্রে এই রাজ্যের স্বার্থে কেন্দ্রের শত্রু বিজেপির রাজ্যে বন্ধু হতে দোষ কোথায় ? বিজেপি দাঙ্গাবাজ ? ও তাই ? গোধরা , গুজরাট বলবেন তো ? আরে মশাই তখন এই মমতা ব্যানার্জী তখন তো বিজেপি মন্ত্রিসভার ই সদস্য ছিলেন। মোদিকে দেওয়া ফুলের তোরা ভুলে গেছেন ? কংগ্রেসের আমলে শিখ দাঙ্গা ভুলে গেলেন ? আর ২০১১ সাল থেকে এই রাজ্যে ঠিক কতগুলো দাঙ্গা হয়ে গেছে একটু গুনে দেখবেন ? তাহলে দাঙ্গাবাজ কে বা কারা ?
তবে স্বীকার করতেই হবে , রাজ্যে পালাবদলের জন্য যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন প্রয়োজন ছিল , তা আপনারাই পারতেন। আন্দোলনটা আপনাদের আসে ভালো। কিন্তু ডোবা নৌকোয় উঠে কি কিনারে যাওয়া যায় ? কংগ্রেস তো ডোবা নৌকো। তাই যদি সত্যিই এরাজ্যে সরকারের পালাবদল চাইতেন তাহলে বিজেপিকে অচ্ছ্যুত করে রাখতেন না। কংগ্রেস বন্ধু হলে , তৃণমূল বন্ধু হলে বিজেপিই বা নয় কেন ?
জানি বলবেন .. এই চোপ ! এসব রাজনীতি তোমরা বুঝবে না। বা বলবেন ব্যাটাকে চিনে রাখ তো ......
না , কথা বা মত পছন্দ না হলে মানুষকে হুমকি দিতে এখনও আপনারা পিছপা হন না । কি বললেন অনেক পাল্টেছেন ? ধূর ক্ষমতা পেলে আবার পুরোনো মূর্তিতে ফিরবেন। কেমন ? তাই তো ? রাগ করবেন না , চালিয়ে যান .. হে ! হে !..
TAGS- cpim, bjp, tmc, i.n.d.i.a, west bengal, politics, md selim, mamata banerjee, suvendu adhikari, modi, brigade , editorial, prabir rai chaudhuri, manusher bhasha