অশান্ত মুর্শিদাবাদে এবার কেন্দ্রীয় বাহিনী : শুভেন্দু অধিকারীর আবেদনে সায় দিয়ে বিরাট নির্দেশ হাইকোর্টের
ওয়াকফ সংশোধনী আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অশান্ত মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশে শুভেন্দু অধিকারীর বিশেষ ভূমিকা: একটানা আন্দোলন, আদালতের দ্বারস্থ হয়ে প্রশাসনের জবাবদিহি নিশ্চিত করলেন বিরোধী দলনেতা
নিজস্ব প্রতিবেদন ● কলকাতা/মুর্শিদাবাদ
ওয়াকফ সংশোধনী আইন প্রত্যাহারের দাবিতে উত্তাল মুর্শিদাবাদ। গত কয়েকদিন ধরে জেলাজুড়ে বিক্ষোভ, রেল অবরোধ, জাতীয় সড়কে আগুন, সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে সামশেরগঞ্জ, জলঙ্গি, সুতি ও ধূলিয়ান সহ একাধিক এলাকা। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে শান্তি ফেরাতে এবং মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই নির্দেশের পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
আদালতের দ্বারস্থ হয়ে প্রশাসনকে চাপে ফেললেন শুভেন্দু
অশান্ত মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য প্রশাসনের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর আবেদন ছিল—অবিলম্বে সেনা অথবা কেন্দ্রীয় বাহিনী নামাতে হবে। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার জানিয়ে দেয়, মুর্শিদাবাদে শান্তি ও সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনাই এখন রাজ্যের প্রধান দায়িত্ব। পরিস্থিতি বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেয় আদালত।
I am deeply outraged and vehemently condemn the atrocious incident of vandalism at the Jalangi BDO Office in Murshidabad District, carried out by radical elements masquerading as protestors against the Anti-Waqf Law.
— Suvendu Adhikari (@SuvenduWB) April 12, 2025
Let it be known that this was not an act of protest, rather a… pic.twitter.com/vexakFnNBi
শুভেন্দুর পক্ষের আইনজীবী আদালতে অভিযোগ করেন, “বিএসএফ নামানো হলেও জেলা প্রশাসন তাদের কাজ করতে দেয়নি।” এমনকি তিনি আরও বলেন, “গ্রন্থাগার মন্ত্রী নিজে হুমকি দিয়েছেন, যে অশান্তি আরও ছড়াতে হবে।”
বিচারপতিরা স্পষ্টভাবে জানতে চান, কোন কোন জেলা এখন স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত? রাজ্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এখনও পর্যন্ত ১৩৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে আদালত এই বক্তব্যে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। শুভেন্দুর আইনজীবীর তথ্যপ্রমাণ এবং যুক্তি এতটাই দৃঢ় ছিল যে, আদালত শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেয় এবং জানায়, “পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী যৌথভাবে কাজ করবে শান্তি ফেরাতে।”
মুর্শিদাবাদে মৃত্যু ও সংঘর্ষ ঘিরে বিস্ফোরক শুভেন্দু
ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে উত্তেজনা যখন চরমে, ঠিক তখনই সামশেরগঞ্জের ধূলিয়ানে বাবা ও ছেলে—হরগোবিন্দ দাস এবং চন্দন দাস—হত্যার অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি কাঠগড়ায় তোলেন। তিনি দাবি করেন, “এই ঘটনা প্রমাণ করে যে রাজ্যে আইনের শাসন নেই, এবং মুখ্যমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে দুষ্কৃতীরা এমন নৃশংসতা চালাচ্ছে।”
শুধু তাই নয়, তিনি আরও বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ এখন সময়ের দাবি। রাজ্যপালকে বিষয়টি জানাব এবং প্রয়োজনে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করব।” দিল্লি থেকে কলকাতা—দু’জায়গাতেই শুভেন্দুর তৎপরতা প্রশাসনের ওপর চাপ বাড়িয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
মুর্শিদাবাদ সফরে শুভেন্দু: মথাবাড়ি পরিদর্শনের রেশ
এই প্রথম নয়, আগেও শুভেন্দু অধিকারী মুর্শিদাবাদের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিছুদিন আগেই মথাবাড়িতে যাওয়ার সময় তাঁর কনভয় আটকে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশি বাধা পেরিয়ে তিনি পৌঁছান গ্রামে, কথা বলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। সেই সময়ও তিনি দাবি করেন, “সরকার দুর্নীতিকে আড়াল করতে নিরীহ মানুষদের ওপর চড়াও হচ্ছে।” তৎকালীন ঘটনাতেও কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর দাবি করেছিলেন শুভেন্দু। সেই দাবি এবার বাস্তব রূপ পেল হাইকোর্টের নির্দেশে।
প্রশাসনের প্রতি আস্থা নেই, মানুষের পাশে থাকার বার্তা
শুভেন্দু অধিকারী একাধিকবার রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বারবার বলেছেন, “মানুষ আজ ভয়ভীতির মধ্যে আছে, প্রশাসনের ওপর আস্থা নেই।” তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, “পুলিশ পক্ষপাতদুষ্টভাবে কাজ করছে এবং শাসকদলের প্রভাবে নিরপেক্ষতা হারাচ্ছে।” এই অবস্থায় আদালতের দ্বারস্থ হওয়াকেই গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের অন্যতম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন শুভেন্দু।
ওয়াকফ আইনকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া অশান্তি শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, সমগ্র রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলার প্রশ্ন তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দলনেতা হিসেবে শুভেন্দু অধিকারীর সক্রিয় ভূমিকা, আইনি পদক্ষেপ ও গণমাধ্যমে সরব উপস্থিতি রাজ্যের রাজনীতিতে এক শক্তিশালী বার্তা দিচ্ছে। আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষা, সংবিধানের অধিকার রক্ষায় তিনি যে আরও আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিতে চলেছেন, তার ইঙ্গিত মিলেছে শুক্রবারের আদালতের রায় এবং পরবর্তী প্রতিক্রিয়া থেকেই।
মুর্শিদাবাদে শান্তি ফিরবে কিনা, সেটা সময় বলবে। কিন্তু এই লড়াইয়ে শুভেন্দু অধিকারী যে এখন প্রশাসনের অন্যতম ‘চ্যালেঞ্জিং মুখ’, তা নিয়ে সন্দেহ নেই কোনও।
Disclaimer from Manusher Bhasha
Manusher Bhasha firmly stands for peace, harmony, and unity in society. We strongly condemn all forms of violence, vandalism, and unlawful activities. Our sole purpose is to present verified news and analysis with a commitment to truth, transparency, and public awareness. We advocate for lawful, democratic solutions to all disputes and always support peaceful resolution over conflict.