শিলিগুড়ির শান্তিপূর্ণ চরক পুজোকে কেন্দ্র করে অশান্তি: ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ নাকি পূর্বপরিকল্পিত হামলা? বিজেপি প্রশ্ন তোলে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে হিন্দু উৎসব টার্গেট করার প্রবণতা নিয়ে
প্রতিবেদন: মানুষের ভাষা ডেস্ক | ১৪ এপ্রিল, ২০২৫ | শিলিগুড়ি
পশ্চিমবঙ্গ যেন অশান্তির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। মুর্শিদাবাদের রক্তাক্ত ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার উত্তাল হয়ে উঠল শিলিগুড়ি। চরক পুজোর মতো একটি হিন্দু লোকাচারিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রবিবার রাতে শিলিগুড়ির জ্যোতিনগরে যা ঘটল, তাতে প্রশ্ন উঠছে — ধর্মীয় সহাবস্থান নাকি পরিকল্পিত উস্কানি? ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ কি আদতে একটা অজুহাত মাত্র?
সংঘর্ষের ছায়ায় শিলিগুড়ি: দায় কার?
সোমবার ভোরে হঠাৎই শিলিগুড়ির পুরনিগমের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জ্যোতিনগর এলাকায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ইটবৃষ্টি, লাঠিচার্জ, সম্পত্তি ভাঙচুর— সব মিলিয়ে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা। হিন্দুদের চরক পুজোর অনুষ্ঠানের মধ্যে এ ধরনের সহিংসতা নিছক 'তুচ্ছ ঘটনার বহিঃপ্রকাশ' নয়, বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
Sadhus attacked in Siliguri for worshipping Shiv Ji, reports @republic
— Kanchan Gupta 🇮🇳 (@KanchanGupta) April 14, 2025
15 April, Hindu Bengali New Year’s Day, a rally by Islamists is scheduled in Siliguri, permission for which has been given by West Bengal Chief Minister-cum-Home Minister and her police. pic.twitter.com/u6PNitEqfG
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের মতে, পুজোর স্থান নির্বাচন ও আয়োজনের দায়িত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই একটি গোষ্ঠী আপত্তি জানাচ্ছিল। এমনকি এই অনুষ্ঠান বন্ধের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলেও অভিযোগ। বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, হিন্দু উৎসবগুলিকে ‘বিতর্কিত’ বলে দাগিয়ে দিয়ে একটা বৃহত্তর ষড়যন্ত্র চলছে।
Image - bangla.aajtak.in/
পুলিশের ভূমিকা ও রাজনৈতিক ব্যর্থতা
সংঘর্ষের খবর পেয়েই বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও প্রশ্ন উঠেছে, আগে থেকে গোয়েন্দা তথ্য থাকা সত্ত্বেও কেন এমন ঘটনা ঘটতে দেওয়া হল? কেন শিলিগুড়ির এএসিপি রবিন থাপাকে মুর্শিদাবাদে বদলি না করে জ্যোতিনগরে রাখা হল? ঘটনার গুরুত্ব বুঝেই কি তাঁকে ধরে রাখা হয়েছিল, নাকি পুলিশ প্রশাসন জানত যে কিছু একটা ঘটতে চলেছে?
বিজেপি নেতৃত্ব বলছে, রাজ্য সরকার শুরু থেকেই ওয়াকফ ইস্যুতে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। মুখ্যমন্ত্রীর নীরবতা, স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের দায়সারা বিবৃতি প্রমাণ করে, তারা আসলে এই সংঘর্ষের নেপথ্য কারণকে আড়াল করতে চাইছে। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু উৎসবগুলিকে কেন্দ্র করে বারবার যে ধরনের উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে, তা শুধু রাজনৈতিক নয়, সাংস্কৃতিক ভাবেও মারাত্মক উদ্বেগের।
ওয়াকফ আইন: কার জন্য?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য তুলে ধরলে বোঝা যায়, ওয়াকফের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি বছরের পর বছর ধরে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে মুষ্টিমেয় একটি শ্রেণি ভোগ করে এসেছে। সেই সম্পত্তির সঠিক ব্যবহার ও জনসাধারণের কল্যাণে ফিরিয়ে আনতেই ওয়াকফ আইন সংশোধন অত্যন্ত জরুরি। অথচ, এই সংস্কারের বিরোধিতা করেই এখন পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রান্তে হিংসা ছড়ানো হচ্ছে — মুর্শিদাবাদ হোক বা শিলিগুড়ি, চক্রান্ত যেন সর্বত্র।
বিজেপির বক্তব্য: "এই হামলা শুধু হিন্দুদের উপর নয়, ভারতীয় সংবিধানের উপর আঘাত"
বিজেপি নেতারা সাফ বলছেন — এই হামলা কোনও গোষ্ঠী বা পুজোর আয়োজকদের বিরুদ্ধে নয়, এটা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত। চরক পুজোর মতো হাজার বছরের পুরনো হিন্দু আচার্য নিয়ে এমন সংঘর্ষ ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার জ্বলন্ত প্রমাণ। যে রাজ্যে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষ নিজের উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারে না, সে রাজ্যে গণতন্ত্র কোথায়?
শিলিগুড়ির ঘটনাকে খাটো করে দেখলে চলবে না। রাজ্যের অন্যান্য অংশে এই ‘প্রতিবাদের নামে হিংসা’ ছড়িয়ে পড়ার আগেই প্রয়োজন কড়া পদক্ষেপ। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত দ্রুত হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
হিন্দুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় বিজেপি দায়বদ্ধ বলেই আজ জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে কড়া বার্তা দিচ্ছে — “ভারতের মাটি হিংসার জন্য নয়, সম্প্রীতির জন্য। কিন্তু কেউ যদি বারবার সেই সম্প্রীতিকে আঘাত করে, তবে প্রত্যাঘাত হবেই।”