"স্কুলে যাব না, যতক্ষণ না সরকার স্বচ্ছ তালিকা প্রকাশ করছে এবং স্থায়ী সমাধানের পথ দেখাচ্ছে।"
রাজ্যকে চাপে রেখে শিক্ষক আন্দোলনে নতুন মোড়
মানুষের ভাষা প্রতিবেদন
কলকাতা:
দীর্ঘ টালবাহানার পর রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় যেন এক নতুন মোড়। এসএসসি দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সাময়িক স্বস্তি মিললেও, 'যোগ্য' চাকরিহারা শিক্ষকরা ফেরার পথে হাঁটছেন না। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন— "স্কুলে যাব না, যতক্ষণ না সরকার স্বচ্ছ তালিকা প্রকাশ করছে এবং স্থায়ী সমাধানের পথ দেখাচ্ছে।"
এই মুহূর্তে রাজ্য সরকারের শিক্ষা প্রশাসন, প্রধান শিক্ষক মহল, এমনকি জেলা পরিদর্শকদের মধ্যেও চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা। বেতন পোর্টাল বন্ধ, কারা বেতন পাবেন— জানা নেই প্রধান শিক্ষকদের। প্রশাসনিক স্তরে চলেছে তালিকা চূড়ান্তকরণের তোড়জোড়।
‘যোগ্য’ শিক্ষকরা মুখ খুললেন, বললেন— “মর্যাদার লড়াই”
‘যোগ্য শিক্ষক অধিকার মঞ্চ’-এর সক্রিয় সদস্য মেহেবুব মণ্ডল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন— "আমরা গুড ফ্রাইডের পরে শনিবার স্কুলে যাচ্ছি না। এসএসসি অফিস তালিকা দিক। শুধু নির্দেশে কিছু হবে না, স্বচ্ছতা চাই।" সোমবার করুণাময়ীতে মহা অবস্থান। তাঁদের দাবি, আবার পরীক্ষায় বসার কথা ভাবছেন না তাঁরা। বরং প্রয়োজনে এসএসসি ভবনের সামনে ধরনায় বসবেন।
বিচারালয়ের রায়: স্বস্তি না সর্বনাশ - বিভ্রান্তি
সুপ্রিম কোর্ট ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরিতে ফিরিয়ে দিলেও, শর্তসাপেক্ষে পরীক্ষায় বসার কথা বলেছে। এখানেই চরম আপত্তি। ইংরেজি বিষয়ের চাকরিহারা শিক্ষক তাপস মজুমদার বললেন—
"এই রায় যেন ভেন্টিলেশন থেকে বার করে ছ’মাসের আয়ুকাল দেওয়া। এটা মানা অসম্ভব।"
অন্যদিকে, রাজ্যের প্রধান শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বললেন,
"চাকরি ফেরানোয় স্কুলের কুল চালনার সমস্যা অনেকটা মিটবে। তবে দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি।"
বেতন নিয়ে অজস্র প্রশ্ন, নির্দেশ নেই দফতরের
জেলা পরিদর্শকদের কাছে এখনও স্পষ্ট তালিকা আসেনি। বাঙুর মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন—
"সুপ্রিম কোর্টের রায় আছে ঠিকই, কিন্তু শিক্ষা দফতরের কোনও নির্দেশ এখনও হাতে আসেনি। তালিকা ছাড়া বেতন চালু বা বন্ধ করা সম্ভব নয়।"
প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে আশঙ্কা, বেতন পোর্টালে ভুল ক্লিক করলে আইনগত সমস্যায় পড়তে পারেন। পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্র জানিয়েছেন—
"বেতন সংক্রান্ত চূড়ান্ত তালিকা না পেলে আমরা কোনও পদক্ষেপ নিতে পারি না।"
কমিশনের নতুন প্রস্তাব: ওএমআর শিটে স্বচ্ছতা
স্কুল সার্ভিস কমিশন সূত্রে খবর, ওএমআর শিটের কার্বন কপি এবার পরীক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হবে, যা বাড়িতে নিয়ে যাওয়া যাবে। ফলপ্রকাশের আগেই প্রকাশিত হবে উত্তরপত্র। স্বচ্ছতার এই পদক্ষেপ নিয়ে আবার উঠছে প্রশ্ন— এতদিন কেন নয়?
মানুষ কী ভাবছেন এই লড়াই নিয়ে?
সাধারণ মানুষ থেকে শিক্ষামহল— অনেকেই এই নির্দেশকে দ্বৈতস্বরূপ বলছেন। ব্যবসায়ী দেবাশীষ মজুমদারের মতে—
"প্রথমে সকলকে বরখাস্ত, তারপরে কয়েকদিনের ব্যবধানে যোগ্যদের ফিরিয়ে আনার রায়— এই দ্বিধা বিভ্রান্তিকর। বিচার ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।"
অপরদিকে, সাধারণ নাগরিক সুজয় কর্মকারের মত—
"স্কুল চালাতে তো শিক্ষক দরকার! সুপ্রিম কোর্টের রায় বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।"
অন্যদিকে, পার্থপ্রতিম সরকার বলছেন—
"আদালতের সিদ্ধান্ত সঠিক, তবে ‘যোগ্য’দের সম্মান-সহ ফিরিয়ে আনা দরকার।"
এক ঐতিহাসিক শিক্ষক আন্দোলনের দিকেই এগোচ্ছে রাজ্য?
শিক্ষকদের লড়াই আজ শুধু চাকরির নয়, আত্মমর্যাদার। আদালতের রায় স্বস্তি দিলেও, তা অর্ধেক পথ। স্থায়ী নিয়োগ, স্বচ্ছ তালিকা এবং সম্মান-সহ ফেরা না হলে, ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকারা রাজ্যজুড়ে নতুন ‘চরম সিদ্ধান্ত’-এর পথে হেঁটে যেতে পারেন— যেটা রাজ্য প্রশাসনের সামনে এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে চলেছে।