দেশের নিরাপত্তায় চরম আঘাত -
হিন্দু নিধন : মানুষের প্রশ্ন - আর কত ?
কেন্দ্রে কি জ্বরার লক্ষণ স্পষ্ট ?
রাষ্ট্রীয় শোক কেন নয় ?
এরাজ্যের বিজেপির ভবিষ্যৎ কি
বিশেষ প্রতিবেদন : প্রবীর রায় চৌধুরী
দেশের নিরাপত্তায় চরম আঘাত , রক্তাক্ত ভূস্বর্গ, প্রাণ গেলো নিরীহ হিন্দুদের ; কিন্তু কি আশ্চর্য , ২৪ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও এর প্রত্যুত্তর দিতে এতো দেরি ? নিদেন জঙ্গিদের ধরাও গেলোনা। এতো মিটিং , সারা বিশ্বের সমর্থন , সমবেদনা - শত্রুকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার এর থেকে ভালো সুযোগ কি পেতো সরকার ? সরকারের মাথার কি করবেন সে তারাই জানেন , তবে আবার এমন কাজ করবেন না যাতে বেশকিছু দেশবিরোধী আবার বলার সুযোগ পায় যে সার্জিকাল স্ট্রাইক মিথ্যে ছিল। কেউ কেউ আবার ভিডিওর প্রমাণ চেয়ে বসতে পারে। তবে একটা ব্যাপারে দেশের মানুষের হতাশ হওয়ার বিশেষ কারণ থাকল। যেখানে , সরকার যথার্থ ভাবেই কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক পালনের নির্দেশ দেন , সেখানে এতবড় মর্মান্তিক ঘটনাতেও কি সে কথা তাদের মনে পড়লো না ? এই ঘটনা কি রাষ্ট্রীয় শোকের নয় ?
আসলে বয়স কালের নিয়মে অভিজ্ঞতা যেমন বাড়ায় , তেমন তার সাথে মানুষকে স্থবিরও করে তোলে , কাউকে কাউকে সাহসীর বদলে ক্রমান্বয়ে ভীরু করে তোলে - সিদ্ধান্ত গ্রহণে আসে শ্লথতা। তাই কালের নিয়মেই অবসর নামক এক নিয়ম সবাইকে মেনে নিতে হয়। যেখানে দেশের পররাষ্ট্র নীতি , ইন্টেলিজেন্স বারবার ফেল করছে সেখানে এই অপ্রিয় প্রশ্নগুলো উঠবেই। মানুষ কিন্তু মোদী-শাহ সহ বিজেপিকে ক্ষমতায় এনেছে তাদের প্রো-হিন্দু স্ট্যান্ডের জন্যেই। আর সেখানে দাঁড়িয়ে , যেখানে হিন্দু পরিচয় খুঁজে খুঁজে নরমেধ যজ্ঞ চালালো পাকিস্তানি জেহাদিরা সেখানে এই শ্লথতা - অর্থাৎ যাকে বলে কুইক রেসপন্স তার এখনো বড্ড অভাব।
হিন্দুদের উপর অত্যাচার এমন নয় যে হঠাৎ হলো। এটা একপ্রকার নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে যেখান থেকে পারবে , এসে হিন্দুদের অত্যাচার করে , লুটপাঠ করে , মহিলাদের ধর্ষণ করে চলে যাবে। আর হিন্দুরা শুধু অসীম হরে সহ্য শক্তির পরীক্ষা দিয়ে যাবে। প্রতিবাদ করলে কেউ পাশে দাঁড়াবে না। প্রতিবাদ করলে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে আবার তাকেই কেস দিয়ে জেলে পুড়ে দেবে। তাহলে যে বিজেপির ওপর হিন্দুরা ভরসা দেখালো তাদের সময়েই তো এ রাজ্যে তারা সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়লো। মনে রাখুন , কেন্দ্রে তিনবারের জন্য বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে , সময়টা কম নয়।
পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কি দেখেছে ? বিজেপি নেতারা (এরা নেতা হওয়ার যোগ্য ?) ভোটের সময় টিকিট নিয়ে লড়াই করেন , বিলম্বিত হয় প্রার্থী ঘোষণা , যদি বা অনেক চিন্তন বৈঠক নামক এক অদ্ভুত বকচ্ছপ কান্ড করে প্রার্থী ঘোষণা করেন , তো ডায়মন্ডহারবার মূল শত্রুকে ওয়াক ওভার দিয়ে দেন এক আশ্চর্য রহস্যে ঘেরা কারণে ; যদি বা তাও মেনে নিলো মানুষ , তো নিজেদের পার্টি ফান্ডের টাকা ভোটে না কাজে লাগিয়ে নিজেরাই পকেটে পুরে নেন ; তাতেও শেষ নয় এবার যদিবা ভোটের দিন অনেক হম্বিতম্বি করে আসরে নামেন তো কাউন্টিং দেন বিক্রি করে , নয়তো ভয়ে বেরিয়ে আসেন কাউন্টিং শেষের আগেই। এর মাঝে একটা ঘটনা ঘটে , দিল্লি থেকে কিছু দাদু প্রচুর আশা জাগিয়ে হেলিকপ্টারের ধুলো উড়িয়ে আসেন , হাত নাড়েন , প্রতিপক্ষকে উল্টো করে ঝুলিয়ে সোজা করার কথা বলেন , এও বলেন একজন কর্মীর গায়ের লোমও নাকি শাসক ছুতে পারবে না - সবাই নির্ভয়ে ভোট দিন ও বিজেপিকে জেতান -"ভারী বহুমত সে " . ডবল ইঞ্জিন সরকারের কথা বলে হেলিকপ্টারে উঠে যে পথে এসেছিলেন সেপথেই ফিরে যান। তার পর ? ওপরের এতসব সংগত কারণেই এরাজ্যে বিজেপির আসার তরী ডোবে। রেজাল্টের রাত থেকেই শুরু হয় শাসকের প্রতিশোধ। আর হেলিকপ্টার দাদুরা সেই যে হারিয়ে যান আর পাওয়া যায় না।
মানুষ তিতিবিরক্ত। এসবের সঙ্গে মানুষ এটাও দেখেছে একের পর এক সরকারি দফতরে বেনিয়ম নিয়ে একের পর এক মামলা , হাইকোর্ট , সুপ্রিম কোর্ট , সিবিআই ছুটছে , ইডি ছুটছে , একদল সাংবাদিক ছুটছে , লাইট - ক্যামেরা - অ্যাকশন !! ব্যাস হঠাৎ সব অন্ধকার। বিশাল সুড়ঙ্গ। শেষে নাকি আলো দেখতে পাচ্ছে না কোর্ট।
এরই মধ্যে আবেগপ্রবণ মানুষ যখনই গলার শির ফুলিয়ে বলতে গেছে - দেখিস ভাই এবার কিছু হবেই হবে , আরও উৎসাহী কিছু স্বচ্ছ মানুষ লেখালিখি বা ইউটিউবের মতো প্লাটফর্মে নিজের মত জানাতে গেছে - তার ঘেঁটু ধরে শাসক দিয়েছে নেড়ে। তবু মানুষ , এই মানুষগুলোই আশা নিয়ে বেঁচে আছে। আর সেই আসার বাগানে তাদেরই কবর খুঁড়ে চলেছে কিছু অপদার্থ নেতা। একের পর এক মামলা চলে গেছে হিমঘরে। সারদা থেকে আরজিকর , অনুব্রত থেকে মানিক ভট্টাচার্য - হয় জামিন , নয় তো সিবিআই-ইডির ঘুমিয়ে থাকা। আসলে হয় তোলা আর ঘুমে ঢোলা খুব ছোয়াচে। দাদুর যদি ঘুম না ভাঙে তাহলে নাতি আর কি করে ?
আর এই সব করে কি বঙ্গ বিজেপির নেতাদের সম্মান বেড়েছে ? দিনের শেষে প্রকৃত সৎ রাজনীতিককে মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝে নিতে হয় তার চোখের প্রশ্ন।, মনের সন্দেহ। কেন্দ্রের নীরবতা , শৈথিল্য যেমন এক ভয়ঙ্কর জ্বরা -র ইঙ্গিত দিচ্ছে , তেমনি যে বিজেপি নেতারা সত্যিকারের শাসকের বিরুদ্ধে লড়তে চাইছে তাদের সেই লড়াই মাঝ রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ছে বারবার। শুভেন্দু অধিকারী এরাজ্যের সরকার বিরোধী মানুষের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছেন যেমন , ঠিক তেমনই তার চলার দুর্বার গতিকে বারবার দলীয় নীতি গ্রহণের নাম করে মন্থরতা , চাপিয়ে দেওয়া আদেশ আর পিছন টেনে ধরে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যর্থ প্রয়াসে মাঝ রাস্তায় গতিরোধ করে দিচ্ছে একদল অপদার্থ দলীয় সম্রাট। যে বা যারা শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে তারই সহচরের গেস্টহাউসে রাত কাটায় , তাদের কাছ থেকে আর কিই বা মানুষ আশা করতে পারে।
পুরো দলীয় শক্তিকে চাঙ্গা করতে যে মানুষটিকে খোলা হাত দায়িত্ব দেওয়া দরকার ছিল অনেক আগে , যাতে ২৬ এর আগে সে ঘর গোছানোর সুযোগ পেতো তা করতেও অনীহা প্রচুর। তারা ভাবছেন। ভেবেই চলেছেন। ঠিক যেন ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থী ঘোষণা হচ্ছে। সব শেষে কে ? মানুষ দেখছে এসব। মনে রাখুন এই কারণেই লোকসভায় বিজেপি আর একক সংখ্যাগরিষ্ট নয়। যাদের হাত ধরে আছে তাদের দেশের মানুষ রাজনীতির মীরজাফর বলেই জানে। এতটাও শিক্ষা হয়নি ?
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন - সত্যরে লও সহজে। বার্ধক্য , জ্বরা - এ হলো কালে চিরসত্য। স্বামীজী বলেছেন জমে থাকা জলে কচুরিপানা জমে। প্রবাহমানতাই জীবনের নিয়ম। তারুণ্যের পথে বাধা হতে নেই। শুভেন্দু অধিকারী ও যোগী আদিত্যনাথ আগামী দিনের সত্য। যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসতে বা থাকতে চায়।