শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে ‘হিন্দু শহীদ দিবস’ পালন, বিজেপির প্রতিবাদ কর্মসূচি
নিজস্ব সংবাদদাতা | ১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার সন্ধ্যা ৭:১৫p

মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জের জাফরাবাদে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক হিংসা নিয়ে উত্তাল বাংলার রাজনীতি। জেহাদিদের হাতে নিহত দুই হিন্দু নাগরিক—হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাস—এর স্মৃতির উদ্দেশ্যে বুধবার ‘হিন্দু শহীদ দিবস’ পালন করল বিজেপি। রাজ্য বিধানসভা চত্বরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে আয়োজন হয় এই কর্মসূচির। প্রদীপ জ্বালিয়ে, পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয় দুই নিহতকে। রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন ব্লক ও অঞ্চলেও পালিত হয়েছে এই কর্মসূচি।
শুভেন্দুর কড়া বার্তা
বুধবার সকালে এক্স হ্যান্ডেলে (প্রাক্তন টুইটার) শুভেন্দু লেখেন—
“মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জের জাফরাবাদে জেহাদিদের আক্রমণে দুই হিন্দু নাগরিক; শ্রী হরগোবিন্দ দাস ও শ্রী চন্দন দাস শহীদ হন। আজ আমার নন্দীগ্রাম বিধানসভার টেঙ্গুয়াতে বিজেপি কর্মী, সমর্থক এবং সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে ‘হিন্দু শহীদ দিবস’ শ্রদ্ধার সাথে পালিত হলো। শহীদ বেদীতে প্রদীপ প্রজ্বলিত করে পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে হিন্দু শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালাম।”
তাঁর আরও সংযোজন, “বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের এই হিন্দু হত্যাকারী, তোষণবাজ ব্যর্থ পুলিশমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে।” তিনি সাফ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ করা উচিত। হিন্দুরা এই রক্তক্ষরণে আবেগতাড়িত ও বেদনায় বিদীর্ণ।”
রাজ্যজুড়ে হিন্দু শহীদ দিবস পালন
শুধু বিধানসভা নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেও বিজেপি ও সহযোগী হিন্দু সংগঠনগুলি দিনটি শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে। শুভেন্দু সোশ্যাল মিডিয়ায় আহ্বান জানান—
“নিজের এলাকায়, পাড়ায়, ব্লকে, সমগ্র রাজ্য জুড়ে হিন্দু শহীদ দিবস পালন করুন। একটি শহীদ বেদী স্থাপন করে কালো ব্যাচ পরে শহীদ বেদীর সামনে মোমবাতি বা প্রদীপ জ্বালান। শহীদ দুই হিন্দু ভাইয়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিরবতা পালন করে ঐক্যবদ্ধ হোন এবং ব্যর্থ পুলিশমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করুন।”
তিনি এক হাত নেন রাজ্য প্রশাসনকে—
“এই তোষণকারী হিন্দুবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া আর দ্বিতীয় বিকল্প কোনো পথ নেই।”
ঘটনার পটভূমি
সাম্প্রতিক মুর্শিদাবাদ হিংসায়, অভিযোগ উঠেছে ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন বিরোধী প্রতিবাদ চলাকালীন দুই হিন্দু নাগরিককে জেহাদিরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। ঘটনাটি কেন্দ্র করে এলাকায় প্রবল উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানানো হয়েছে, বিজেপি নেতৃত্ব স্পষ্ট ভাষায় দাবি করছে—এটি হিন্দু নিধনের ঘটনা।
তৃণমূলের পাল্টা জবাব
তৃণমূল নেতাদের তরফে অবশ্য এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেই উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার একটি অনুষ্ঠানে বলেন,
“সীমান্ত রক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব। কেন্দ্র এবং বিএসএফ ব্যর্থ। যারা বাইরে থেকে এসে গোলমাল করছে, তারা কারা?”
তিনি আরও বলেন, “যেখানে গন্ডগোল হয়েছে, সেটা তৃণমূলের নয়, কংগ্রেসের জেতা আসন। বিজেপি প্ররোচনা ছড়াচ্ছে।”
রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক চাপানউতোর তীব্রতর হচ্ছে। হিন্দু শহীদ দিবস পালনের মাধ্যমে বিজেপি একদিকে যেমন রাজ্য সরকারের হিন্দুবিরোধী রাজনীতির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে, অন্যদিকে রাজ্য সরকার বিজেপিকে দোষ চাপিয়ে দাঙ্গা উসকানোর অভিযোগ এনেছে।
বাংলার রাজনীতিতে এই মুহূর্তে মুর্শিদাবাদের ঘটনার প্রভাব ব্যাপক। শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির এই প্রতিক্রিয়া আগামী দিনে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে হিন্দু ভোট ব্যাঙ্ককে কেন্দ্র করে। এখন দেখার, পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়।