ভারতের আক্রমণের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালালেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান?
৪৫০০ সেনার গণ ইস্তফা, আতঙ্কে কাঁপছে ইসলামাবাদ
Manusher Bhasha | রিপোর্ট: ডেস্ক
পহেলগাঁওয়ের নির্মম গণহত্যার পর ভারতের মাটিতে উঠেছে প্রতিশোধের ঝড়। শোককে শক্তিতে পরিণত করে কূটনৈতিক ও সামরিক, দুই দিক থেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি শুরু করেছে নয়াদিল্লি। আর ঠিক এই আবহেই সামনে এলো চাঞ্চল্যকর খবর — পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির নাকি দেশের মাটি ছেড়ে পালিয়েছেন!
সমাজমাধ্যমে ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে এই খবর। ‘নিখোঁজ’ হয়ে গিয়েছেন পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সামরিক আধিকারিক, এমনকি ৪৫০০ পাক সেনা সদস্যও নাকি একযোগে ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন। এক অভূতপূর্ব সঙ্কটে দাঁড়িয়েছে ইসলামাবাদ। প্রশ্ন উঠছে, কি এমন ভয় ধরালো ভারতের প্রতিশোধস্পৃহা, যে পাক সেনার শীর্ষকর্তা প্রাণ বাঁচাতে গা ঢাকা দিতে বাধ্য হলেন?
উত্তেজনার সূচনা: পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ড
গত সপ্তাহে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও অঞ্চলে এক জঘন্য গণহত্যার ঘটনা ঘটে। গন্তব্যে যাওয়া হিন্দু পর্যটকদের উপর নির্দয় হামলা চালায় সন্ত্রাসবাদীরা। একের পর এক নিরীহ প্রাণ ঝরে যায়, রক্তে রঞ্জিত হয় উপত্যকা।
ঘটনার নেপথ্যে পাকিস্তানি মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির জড়িত থাকার স্পষ্ট প্রমাণ মেলে। এই ঘটনা ভারতীয় প্রশাসন ও গোটা জাতিকে হতবাক করে তোলে। দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক দ্রুত প্রতিশোধ নেওয়ার কৌশল নির্ধারণে তৎপর হয়।
সামরিক প্রস্তুতি
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল অনিল চৌহানের মধ্যে একাধিক বৈঠক হয়। সূত্রের খবর, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা সীমান্তবর্তী আক্রমণাত্মক কৌশল নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সরাসরি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। গোটা বিশ্ব জানে, বর্তমান ভারতের নেতৃত্ব সংযম দেখাতে জানে, আবার প্রয়োজন পড়লে কঠোর পদক্ষেপ নিতেও পিছপা হয় না।
জল্পনার শুরু: কোথায় জেনারেল মুনির?
ঠিক এই সময়েই জল্পনা ছড়ায় — পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির নাকি উধাও হয়ে গিয়েছেন। কয়েকদিন ধরে তাঁকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। মিডিয়া রিপোর্ট ও সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীরা দাবি করতে থাকেন, তিনি হয় দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, নয়তো কোনও গোপন বাঙ্কারে আত্মগোপন করেছেন।
স্থানীয় সূত্রের দাবি
পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দফতর থেকে খবর চাউর হয়, জেনারেল মুনির ‘মিসিং ইন অ্যাকশন’ (MIA) তালিকাভুক্ত হয়েছেন। অপারেশন চলাকালীন তাঁর কোনো খোঁজ মিলছে না — এমনটাও দাবি করেছে কিছু সূত্র।
অন্যদিকে, আরেকটি গুজব ছড়ায় — জেনারেল মুনির তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সেনা অফিসারদের নিয়ে রাওয়ালপিন্ডির এক সুরক্ষিত বাঙ্কারে আত্মগোপন করেছেন।
ইসলামাবাদের অস্বীকার
ইসলামাবাদ এই সমস্ত দাবিকে সরাসরি উড়িয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পাক প্রশাসন জেনারেল মুনিরের একটি ছবি প্রকাশ করে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দফতর (PMO) ২৬ এপ্রিল অ্যাবটাবাদের পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে তোলা একটি গ্রুপ ছবি প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও জেনারেল আসিম মুনির একসঙ্গে বসে রয়েছেন।
ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়:"২৬ এপ্রিল, অ্যাবটাবাদে পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাডেমির ১৫১তম কোর্সের স্নাতক উত্তীর্ণ অফিসারদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ শাহবাজ শরিফ এবং সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির।"
কিন্তু এই ছবি প্রকাশ সত্ত্বেও বিতর্ক কমেনি। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন — বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন ছবি কি সত্যি প্রমাণ করে যে জেনারেল মুনির নিরাপদ? নাকি পুরনো ছবি দেখিয়ে জনমতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে?
১৯৭১ যুদ্ধে ভারতের কাছে আত্মসমর্পনের বিরল ভিডিও
Rare footage of 1971 War. Surrender by Pak army loosing to India
Memorable & Classic footage of 1971 War. Surrender by Pak army. The heroic Indian army saved Bangladesh. But the very Bangladesh had decided to commit suicide now pic.twitter.com/i3jqMjIw1Y
— S Gurumurthy (@sgurumurthy) December 16, 2024
পাক-সেনার ভাঙন: ৪৫০০ সেনার গণ ইস্তফা
ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে আরও একটি বিস্ফোরক তথ্য। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ব্যাপক অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। চরম অনাস্থা এবং হতাশার কারণে প্রায় ৪৫০০ সেনা সদস্য একযোগে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে দাবি করেছে একাধিক সংবাদমাধ্যম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের সম্ভাব্য প্রতিশোধের মুখে দাঁড়িয়ে পাক সেনার মনোবল ভেঙে পড়েছে। অনেকে মনে করছেন, পাকিস্তান সরকারের অদূরদর্শিতা এবং সন্ত্রাসবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা করার দীর্ঘদিনের নীতির পরিণাম হিসেবেই আজ এই অবস্থা।
ইসলামাবাদের চাপা আতঙ্ক
ইসলামাবাদ সরকার আপাতত প্রকাশ্যে কিছু স্বীকার না করলেও, অভ্যন্তরীণ ভাবে বড়সড় সঙ্কটে পড়েছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রতিরক্ষামন্ত্রকের উচ্চপদস্থ সূত্র জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর মধ্যেই ভেঙে পড়েছে শৃঙ্খলা এবং অনুগত্যের কাঠামো।
এই অবস্থায় ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলা তো দূরের কথা, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই পাকিস্তানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইসলামাবাদের আন্তর্জাতিক স্তরে প্রচেষ্টা ও কূটনৈতিক ব্যর্থতা
কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের সিদ্ধান্তের পর ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিষয়টিকে তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করে। জাতিসংঘ, ওআইসি (Organization of Islamic Cooperation) ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণের প্রয়াস চালানো হয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ভারতের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন। তবে, বাস্তবে খুব একটা সাড়া মেলেনি। অধিকাংশ দেশ এটিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করে নিরপেক্ষ অবস্থান নেয়। ফলে পাকিস্তানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা কার্যত ব্যর্থ হয়।
চিন, আমেরিকা ও রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
কাশ্মীর পরিস্থিতিতে বিশ্বশক্তিগুলোর প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত কৌশলী।
চীন, পাকিস্তানের ঐতিহ্যগত মিত্র, উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সরাসরি সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়নি। বরং তারা তাদের আঞ্চলিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়।
আমেরিকা, শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সংলাপের পক্ষে মত দেয়, তবে ভারতের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বজায় রাখে।
রাশিয়া প্রকাশ্যে ভারতের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানায় এবং এটিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করে। ফলে আন্তর্জাতিক মহলের ভারসাম্য ভারতের পক্ষেই ঝুঁকে পড়ে।
ভারতের প্রস্তুতি এবং সামরিক শক্তির প্রদর্শন
ভারত, সম্ভাব্য সবরকম চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুতি নেয়। সীমান্তে সেনা মোতায়েন বৃদ্ধি করা হয় এবং বিশেষ বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়। যুদ্ধবিমান, ট্যাংক, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং আধুনিক অস্ত্রসজ্জায় ভারত তার শক্তি প্রদর্শন করে। পাশাপাশি, কূটনৈতিকভাবে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়। দেশীয় স্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাশ্মীরে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয় এবং শান্তি বজায় রাখতে কড়া নজরদারি চালানো হয়।
ভবিষ্যতের সম্ভাব্য যুদ্ধপরিস্থিতি
যদিও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বড় ধরনের সামরিক সংঘাত হয়নি, বিশ্লেষকরা মনে করেন, সীমান্তে ছোটখাটো সংঘর্ষের ঝুঁকি রয়েছে। যদি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, তবে তা বৃহত্তর যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে। তবে উভয় পক্ষের পরমাণু অস্ত্র থাকার কারণে উন্মুক্ত যুদ্ধের সম্ভাবনা কম। বরং, ভবিষ্যতে সীমিত আকারে প্রক্সি যুদ্ধ, সাইবার আক্রমণ এবং কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্রে পরিবর্তনের সম্ভাবনা
কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক আবহ পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ভারত তার অভ্যন্তরীণ নীতিকে আরও সুসংহত করছে, পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক স্তরে চাপে রয়েছে। আঞ্চলিক রাজনীতিতে চীন ও আমেরিকার ভূমিকা নতুন মাত্রা পেয়েছে। ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে পারে, যার প্রভাব শুধু ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কেই নয়, বরং গোটা অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও গভীর ছাপ ফেলবে।