পহেলগাম হামলা: 'ন্যায় নিশ্চিত হবে' - 'মন কি বাত'-এ প্রতিশ্রুতি দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী
পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে জাতিকে একতা ও দৃঢ় সংকল্পের বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী
ডিজিটাল ডেস্ক, মনুষের ভাষা।
২৭ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার। আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর জনপ্রিয় রেডিও অনুষ্ঠান ‘মন কি বাত’-এর ১২১তম পর্বে জাতির উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই তিনি সাম্প্রতিক পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গে কথা বলেন এবং দেশবাসীর যন্ত্রণা ও ক্ষোভের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "পহেলগামের হামলা আমাদের হৃদয় বিদীর্ণ করেছে। যে রকম নিষ্ঠুরভাবে এই হামলা সংঘটিত হয়েছে, তা সমগ্র মানবতাকে লজ্জিত করেছে।" তিনি আরও বলেন, "ভারতের জনগণের মনে যে ক্রোধের আগুন জ্বলছে, তা আজ সারা বিশ্বে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।" প্রধানমন্ত্রী জানান, হামলার পর বিশ্ব নেতারা তাঁকে ফোন করে সমবেদনা জানিয়েছেন, চিঠি পাঠিয়েছেন এবং বার্তা পাঠিয়ে সন্ত্রাসের এই জঘন্য ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন।
Sharing this month's #MannKiBaat. https://t.co/2d2HftdU4T
— Narendra Modi (@narendramodi) April 27, 2025
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতীয় ঐক্যের জোরালো বার্তা
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, "এই সন্ত্রাসী হামলার পরে গোটা বিশ্ব ১৪০ কোটি ভারতীয়র পাশে দাঁড়িয়েছে।" তিনি জোর দিয়ে বলেন, "ভারত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ অব্যাহত রাখবে এবং যারা এই হামলার জন্য দায়ী, তাদের কঠোরতম শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।"
পহেলগাম হামলা প্রসঙ্গে মোদী বলেন, "এই হামলা সন্ত্রাসের মদতদাতাদের হতাশা ও কাপুরুষতার পরিচয়।" তিনি ব্যাখ্যা করেন, যখন কাশ্মীরে শান্তি ফিরে আসছিল, স্কুল-কলেজে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছিল, অবকাঠামো নির্মাণের কাজে অভূতপূর্ব গতি এসেছিল, গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও মজবুত হচ্ছিল এবং পর্যটকের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বাড়ছিল, তখন ভারতের ও কাশ্মীরের শত্রুরা এই উন্নয়ন ও শান্তি মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা এই নৃশংস হামলা ঘটিয়েছে।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে 'একতা' ভারতের বৃহত্তম শক্তি
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "দেশের ১৪০ কোটি নাগরিকের ঐক্য, সংকল্প এবং সাহস আমাদের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মূলভিত্তি।" তিনি জনগণকে আরও কঠোর সংকল্প নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং বলেন, "আমরা এক জাতি হিসেবে কঠোর ইচ্ছাশক্তির পরিচয় দেবো।"
প্রধানমন্ত্রী মোদী আরও বলেন, "আজ বিশ্ব দেখছে, কিভাবে গোটা ভারত এক কণ্ঠে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে।" তিনি পহেলগাম হামলার শিকার পরিবারগুলিকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, "আমি আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ন্যায় নিশ্চিত হবে। যারা এই জঘন্য হামলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল এবং যারা সরাসরি দায়ী, তাদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে।"
পহেলগাম হামলা: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
পহেলগাম হামলার পরে বিশ্বজুড়ে নেতৃবৃন্দের প্রতিক্রিয়াও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রনেতারা ভারতের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে বলেছেন যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা ভারতের পাশে আছে। এ ধরনের হামলা শুধুমাত্র একটি দেশের নয়, সমগ্র মানবজাতির বিরুদ্ধে অপরাধ।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, "আমাকে বিশ্ব নেতারা ফোন করেছেন, চিঠি পাঠিয়েছেন এবং মেসেজ দিয়েছেন। সবাই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং ভারতবাসীর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন।" তিনি উল্লেখ করেন, সন্ত্রাসবাদ মানবিকতার বিরুদ্ধে এবং বিশ্বকে এই বিপদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর দৃঢ় বার্তা: 'কঠোরতম জবাব দেওয়া হবে'
‘মন কি বাত’-এর ১২১তম পর্বে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমরা যারা এই দেশকে ভালোবাসি, তারা নিজেদের সংকল্পে আরও দৃঢ় হবো। আমরা তাদের চুপ করে সহ্য করবো না যারা ভারতের শান্তি ও অগ্রগতির শত্রু। আমরা ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবো এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবো।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের দেশের সম্মান, আমাদের শহীদদের আত্মবলিদান ব্যর্থ হতে দেবে না। দেশের শত্রুদের শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে।"
মন কি বাত ১২১তম পর্ব: বিজ্ঞান, পরিবেশ সংরক্ষণ ও ইতিহাসের গৌরব উদযাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী
প্রধানমন্ত্রী দেশের বিজ্ঞান চেতনা, পরিবেশ সচেতনতা এবং ঐতিহাসিক আন্দোলনের কথা স্মরণ করলেন 'মন কি বাত'-এ
আজকের ‘মন কি বাত’-এ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুধুমাত্র পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে নয়, আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দেশবাসীর সাথে হৃদয় খুলে কথা বললেন। তিনি দেশের গৌরবময় ইতিহাস, পরিবেশ সংরক্ষণে নাগরিকদের ভূমিকা এবং বিজ্ঞানে ভারতের অগ্রগতির ওপর আলোকপাত করেন।
চম্পারণ সত্যাগ্রহের স্মরণ: আত্মনির্ভরতার প্রথম পাঠ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এই মাসে আমরা চম্পারণ সত্যাগ্রহের স্মরণ করছি। এটি শুধু একটি আন্দোলন ছিল না, বরং ছিল ভারতের আত্মনির্ভরতার প্রথম বড় পাঠ।" ১৯১৭ সালে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে চম্পারণে নীলচাষীদের ওপর ব্রিটিশ অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
মোদী বলেন, "চম্পারণ সত্যাগ্রহ আমাদের শিখিয়েছে কিভাবে সাধারণ মানুষের ঐক্য ও সংকল্প এক বিশাল পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে। আজও, আমাদের উচিত সেই চেতনা ধারণ করে আত্মনির্ভর ভারতের পথে এগিয়ে চলা।"
কন্যাকুমারীতে অ্যাপল চাষের সফলতা: কৃষিক্ষেত্রে নতুন বিপ্লব
প্রধানমন্ত্রী এরপর দক্ষিণ ভারতের কন্যাকুমারী জেলার এক অনন্য সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, কন্যাকুমারীতে এখন অ্যাপল বা আপেল চাষ হচ্ছে, যা সাধারণত ঠান্ডা আবহাওয়ার ফল হিসেবে পরিচিত।
তিনি বলেন, "আমাদের কৃষক ভাই-বোনেরা প্রমাণ করেছেন যে ইচ্ছাশক্তি, গবেষণা এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার হলে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। আজ কন্যাকুমারীতে অ্যাপল চাষ করে কৃষকরা নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছেন।"
এই উদ্যোগ ‘ভোকাল ফর লোকাল’ প্রচারের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ বলে তিনি মন্তব্য করেন এবং দেশের অন্যান্য কৃষকদের নতুন নতুন ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করেন।
'এক গাছ - মা' অভিযান: প্রকৃতির জন্য মায়ের ভালোবাসা
প্রধানমন্ত্রী 'এক গাছ - মা' (Ek Ped Maa Ke Naam) অভিযানের কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, "একটি গাছ লাগানো মানে শুধু একটি গাছ রোপণ নয়, বরং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জীবন রক্ষাকারী আশীর্বাদ রোপণ।"
তিনি জানান, এই আন্দোলন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। মানুষ মায়ের নামে একটি গাছ লাগিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আপনিও যদি মাকে শ্রদ্ধা জানানোর এক অভিনব উপায় খুঁজছেন, তাহলে একটি গাছ লাগিয়ে তার প্রতি ভালোবাসা জানান।"
এই আন্দোলন পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি পরিবার এবং সমাজের সাথে গভীর আবেগের বন্ধন তৈরি করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বৈজ্ঞানিক চেতনার উজ্জ্বল উদাহরণ: দেশের তরুণদের জন্য বার্তা
প্রধানমন্ত্রী ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসারে সাম্প্রতিক উন্নতি নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেন। তিনি বিশেষ করে মিশন চন্দ্রযান-৩-এর সফলতার কথা স্মরণ করেন, যেখানে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করেছে।
তিনি বলেন, "ভারতের বিজ্ঞানীরা বিশ্বকে দেখিয়েছেন যে সংকল্প, অধ্যবসায় ও নতুন চিন্তাভাবনার মাধ্যমে সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করা সম্ভব।"
তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের বিজ্ঞান ও গবেষণায় উৎসাহী করে বলেন, "তোমাদের হাত ধরেই তৈরি হবে ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।"
জনগণের অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প: সাফল্যের নতুন দৃষ্টান্ত
'মন কি বাত'-এ প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষের অসাধারণ কীর্তির গল্পও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "ভারতের প্রকৃত শক্তি লুকিয়ে আছে সাধারণ মানুষের অসাধারণ উদ্যোগে।"
তিনি কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত দেন, যেমন:
উত্তরাখণ্ডের এক তরুণী যিনি পাহাড়ি এলাকায় জৈব চাষ করে দারুণ সফলতা পেয়েছেন।
মধ্যপ্রদেশের এক দৃষ্টিহীন যুবক, যিনি নিজের প্রচেষ্টায় সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন।
পাঞ্জাবের এক শিক্ষিকা, যিনি বিদ্যালয়ে পাঠ্যবইয়ের বাইরে বিজ্ঞান গবেষণা ক্লাব গড়ে তুলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এইরকম প্রচেষ্টা আমাদের সমাজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায় এবং নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে।"
১২১তম 'মন কি বাত'- ভারতীয় আত্মবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি
পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা, মানুষের শক্তির প্রতি অগাধ আস্থা এবং আগামীর প্রতি দৃঢ় আশাবাদের বার্তা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, "আমরা আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, পরিবেশ এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তির বিকাশে গর্ব করি। দেশের প্রতিটি নাগরিকের উচিত নিজ নিজ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করে একটি শক্তিশালী, সমৃদ্ধ এবং আত্মনির্ভর ভারত গড়ার চেষ্টা করা।"