ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে নির্লজ্জ্ব পাকিস্তানের পরাজয়ের দীর্ঘ তালিকা - এবারে সংখ্যাটা বাড়বে শুধু
সম্পাদকীয় , প্রবীর রায় চৌধুরী
পাকিস্তানের বারবার পরাজয় : ইতিহাস সাক্ষী ভারতের অপরাজেয়তার
বিশ্ব ইতিহাসে কিছু দেশ আছে যারা নিজেদের ভুলের পুনরাবৃত্তি করেও শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তান তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। স্বাধীনতার পর থেকেই পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে বারবার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে, সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে, কিন্তু প্রতিবারই তাদের অপমানজনক পরাজয়ের গাথা ইতিহাসের পাতায় রক্তাক্ত অক্ষরে লেখা হয়েছে।
১৯৪৭ সালে শালাতেং-এর যুদ্ধে
১৯৪৭ সালে শালাতেং-এর যুদ্ধের কথা মনে করলে বোঝা যায় পাকিস্তান কীভাবে কাপুরুষের মতো ভারতের নবগঠিত সেনাবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়েছিল। উপজাতীয় বাহিনী দিয়ে কাশ্মীরে অশান্তি সৃষ্টি করে ভারতের ভূখণ্ড ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় পাকিস্তান ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনীর দৃঢ়তা ও পরিকল্পিত আঘাতে পাকিস্তানি দখলদারদের স্বপ্ন চূর্ণবিচূর্ণ হয়। শ্রীনগর বিমানবন্দর রক্ষা পেয়ে কাশ্মীরের ভাগ্য চিরতরে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।
পাকিস্তানের শিক্ষা হয়নি।
১৯৪৮ সালে আবারও তারা জোজিলা পাসে নিজেদের শক্তি প্রমাণের চেষ্টা করে। কিন্তু "অপারেশন বাইসন"-এর মাধ্যমে ভারতীয় সেনারা দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে, পাহাড়ি পথে ট্যাঙ্ক নিয়ে পাকিস্তানিদের ভরাডুবি ঘটায়। উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে ভারতের তেরঙা উড়ে উঠে — আর পাকিস্তানের অহংকার মাটিতে মিশে যায়।
১৯৭১ সাল — পাকিস্তানের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক পরাজয়:
মানব ইতিহাসে সর্ববৃহৎ আত্মসমর্পণ
এরপরে আসে ১৯৭১ সাল — পাকিস্তানের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক পরাজয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত পাকিস্তানকে শুধু সামরিকভাবে নয়, কূটনৈতিকভাবেও কোণঠাসা করে দেয়। ঢাকায় গভর্নর হাউসে ভারতীয় বাহিনীর স্মরণীয় বোমা হামলা এবং বঙ্গোপসাগরে নৌ অবরোধ পাকিস্তানের মনোবল একেবারে ভেঙে দেয়। এক লক্ষেরও বেশি পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে — মানব ইতিহাসে সর্ববৃহৎ আত্মসমর্পণ — যা পাকিস্তানকে চিরতরে বিভক্ত করে বাংলাদেশ সৃষ্টি করে। অথচ আজও পাকিস্তান নিজেদের ভুল স্বীকার করতে লজ্জাবোধ করে না।
১৯৭১: পাকিস্তানের চরম পরাজয় আর ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়
এরপরে আসে ১৯৭১ সাল — পাকিস্তানের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক পরাজয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত পাকিস্তানকে শুধু সামরিকভাবে নয়, কূটনৈতিক ময়দানেও সম্পূর্ণভাবে কোণঠাসা করে দেয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের উপর যে নৃশংসতা চালিয়েছিল — গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ — তা মানব ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ অধ্যায়। এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় ভারত। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত শুধু মানবতার পক্ষে নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বদলে দেওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়।
ভারতের প্রস্তুতি ছিল নিখুঁত। ডিসেম্বর মাসে পূর্ব এবং পশ্চিম দুই ফ্রন্টে একযোগে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানকে চূড়ান্তভাবে ধরাশায়ী করে।
ঢাকার গভর্নর হাউসে ভারতের বিমান বাহিনীর বোমা হামলা পাকিস্তানের মনোবল সম্পূর্ণরূপে ভেঙে দেয়।
বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় নৌবাহিনীর অবরোধ কার্যত পূর্ব পাকিস্তানকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পাকিস্তানের কোনো রসদ সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।
ভারতীয় সেনাবাহিনী পূর্ব ফ্রন্টে চট্রগ্রাম, খুলনা, যশোর, কুমিল্লা — একের পর এক এলাকা মুক্ত করতে থাকে। মাত্র ১৩ দিনের মধ্যে ভারতীয় সেনা ঢাকার উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে ৯৩ হাজার সৈন্যসহ আত্মসমর্পণ করেন। এটি মানব ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সামরিক আত্মসমর্পণগুলির একটি, যা পাকিস্তানকে চিরতরে বিভক্ত করে দেয় এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিশ্চিত করে।
বিশ্বজুড়ে ভারতীয় কূটনীতির প্রশংসা হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) ভারতের পাশে ছিল, 'বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা' চুক্তির মাধ্যমে। আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানকে রক্ষা করতে চেষ্টা করলেও ভারত নিজের কৌশলগত স্থিরতা ও সাহসিকতার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বকে বুঝিয়ে দেয় — ভারত মানবতার পক্ষে দাঁড়ায় এবং কখনো পরাজয় স্বীকার করে না।
পাকিস্তানের মিথ্যার মুখোশ খুলে গিয়েছিল। তারা নিজেদের মানুষকেই রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছিল। অথচ আজও ইসলামাবাদ নিজেদের ভুলের জন্য লজ্জিত নয়। ১৯৭১-এর আত্মসমর্পণ, বাংলাদেশের জন্ম — এই ঘটনা আজও পাকিস্তানের জাতীয় মানসিকতায় গভীর ক্ষত তৈরি করে রেখেছে। কিন্তু ভারত গৌরবের সাথে মাথা উঁচু করে বিশ্বসভায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।
Image - Reddit
মানব ইতিহাসে সর্ববৃহৎ আত্মসমর্পণ
পাকিস্তানের বারবার অপমান: ইতিহাস সাক্ষী ভারতের অপরাজেয়তার
১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ
পাকিস্তানের সামরিক ও কূটনৈতিক ব্যর্থতা এখানেই থেমে থাকেনি। ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ তার আরেকটি নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। আবারও চোরাগোপ্তা হামলার চেষ্টা, আবারও বিশ্বাসঘাতকতা। কিন্তু ভারতীয় সেনারা যে ধরণের অদম্য সাহসিকতা, পরিকল্পনা এবং জাতীয়তাবাদ প্রদর্শন করেছিল, তা বিশ্বের কাছে পাকিস্তানের নীতিহীনতা ও পরাজয়কে আরও নগ্ন করে দিয়েছিল। কফি আনান থেকে ক্লিনটন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব পাকিস্তানের এই আক্রমণকে নিন্দা করেছিল। কারগিল যুদ্ধ পাকিস্তানের জন্য শুধু সামরিক নয়, রাজনৈতিকভাবেও এক অপমানজনক অধ্যায় হয়ে রয়ে গেছে।
পাকিস্তান শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, কূটনৈতিক মঞ্চেও ব্যর্থ হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে কাশ্মীর ইস্যুতে বারবার কান্নাকাটি করেও পাকিস্তান সমর্থন পায়নি। জাতিসংঘ হোক বা ওআইসি, সর্বত্র পাকিস্তান একাকী ও লাঞ্ছিত। আজও তারা সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রীয় নীতির হাতিয়ার করে নিজেদের ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করছে।
'ব্যর্থ রাষ্ট্র' হিসেবে চিহ্নিত
পাকিস্তানের অবস্থা আজ এতটাই করুণ যে বিশ্ববাসী তাদের 'ব্যর্থ রাষ্ট্র' হিসেবে চিহ্নিত করতে দ্বিধা করে না। দেশের অর্ধেক জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে, অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে, আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, এবং আন্তর্জাতিক ঋণের বোঝায় তারা ন্যুব্জ। অথচ এই ধ্বংসস্তূপের মাঝেও ভারতবিরোধী বিষোদ্গারে পাকিস্তান ব্যস্ত।
ভারত বারবার প্রমাণ করেছে — আত্মরক্ষার জন্য আমরা প্রস্তুত, কিন্তু অহেতুক আগ্রাসনের জন্য ভারত যে কড়া জবাব দিতে জানে, তা পাকিস্তানকে প্রতিবার রক্তাক্ত করে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান যদি ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় অপমানের জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত। ভারত আজ শুধু সামরিক শক্তিতে নয়, অর্থনীতিতে, প্রযুক্তিতে, আন্তর্জাতিক মর্যাদায় পাকিস্তানকে বহু আলোকবর্ষ পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে।
পাকিস্তান, এবার অন্তত ইতিহাসের দিকে তাকাও — অপমানের অন্ধকার অতীতে ডুবে থেকে কোনও জাতির গৌরব ফিরে আসে না।