হিন্দু হওয়াই কি অপরাধ ? মেকি সেকুলারিজমের মুখোশ খুলে দিলেন শুভেন্দু : রুখে দাঁড়িয়ে বাড়ালেন সাহায্যের হাত
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর লাগাতার হামলা, ঘরবাড়ি পোড়ানো ও লুটপাটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিবাদে সরব হয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। একের পর এক পোস্টে তিনি রাজ্য সরকারকে বিদ্ধ করেছেন, তুলে ধরেছেন এক গভীর সংকেত: “এই রাজ্যে হিন্দু হওয়াটাই যেন এখন অপরাধ।”
“ধর্মনিরপেক্ষতার প্রলেপ দিয়ে হিন্দু নিধন?”
শুভেন্দু তাঁর এক্স (X) হ্যান্ডেলে অটল বিহারী বাজপেয়ীর একটি পুরনো বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন —
“ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার মূল ভিত্তি হল এখানকার ৮০% হিন্দু জনসংখ্যা।”
তিনি মন্তব্য করেন, বাজপেয়ীর এই কথার প্রাসঙ্গিকতা আজ মুর্শিদাবাদে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। কারণ মুর্শিদাবাদের একাধিক অঞ্চলে এখন হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন, এবং এই কারণে তাঁদের নিজের দেশেই শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই নিতে হচ্ছে।
Incident 1: Shri Ganesh Ghosh, a resident of Betbona in Ward No. 16 of Dhuliyan Municipality; Samsherganj, Murshidabad district, had accumulated 5 lakh Rupees to build a new home. On Friday; April 11, 2025, miscreants attacked his house, set it on fire. Along with the furniture,… pic.twitter.com/Y5CDnoUneI
— Suvendu Adhikari (@SuvenduWB) April 19, 2025
শুভেন্দু আরও তীব্র ভাষায় লেখেন —
“যারা ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পরে হিন্দু-বিরোধী দাঙ্গার পক্ষ নিচ্ছে, তাঁদের হিন্দুরা প্রত্যাখ্যান করেছে। ঘর পুড়িয়ে, মানুষ খুন করে, সুযোগ পেলে গরু ছাগলও চুরি করে নেওয়া— এই হল সেকুলারিজমের আসল রূপ।”
এ বক্তব্যে শুভেন্দু কার্যত তৃণমূলের সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন।
ভারতবর্ষের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী স্বর্গীয় অটল বিহারী বাজপেয়ী জি এক বহুল প্রচারিত সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার কারণ হলো জনসংখ্যার ৮০% এর বেশি হিন্দু।
— Suvendu Adhikari (@SuvenduWB) April 19, 2025
উনি কত বড় দূরদর্শী ছিলেন এবং ওনার বক্তব্য কতটা প্রাসঙ্গিক আজ মুর্শিদাবাদ জেলার দিকে তাকালে বোঝা যায়।… pic.twitter.com/sq3qfTFmda
ভবানীপুর মিছিলে শুভেন্দু: “মমতার নীরবতাই হিংসার উৎস”
শুভেন্দু অধিকারী বিজেপি যুব মোর্চার ডাকে ভবানীপুরে একটি বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিয়ে বলেন —
“মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জ-সহ বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে, তা বর্বরতার চূড়ান্ত। মন্দির ধ্বংস, ঘর পোড়ানো, প্রাণনাশের হুমকি— সবই তৃণমূল সরকারের নীরব প্রশ্রয়ে হচ্ছে।”
তিনি দাবি করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পরিকল্পিতভাবে অপরাধীদের আড়াল করছে। আর এই নীরবতা “হিন্দুদের নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়াচ্ছে।” শুভেন্দু বলেন,
“আমাদের আন্দোলন থামবে না, যতক্ষণ না হিন্দুদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।”
জ্বলন্ত বাস্তবের উদাহরণ: গণেশ ঘোষ ও ছায়া সিংহ
শুভেন্দু অধিকারী তাঁর সোশ্যাল পোস্টে দু’টি হৃদয়বিদারক ঘটনার কথা উল্লেখ করেন—
ঘটনা ১: ধুলিয়ান পৌরসভার বেটবোনা এলাকার গণেশ ঘোষ তাঁর সঞ্চিত ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু দুষ্কৃতীরা তাঁর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। নগদ অর্থ-সহ সব পুড়ে ছাই।
ঘটনা ২: একই ওয়ার্ডের ছায়া সিংহ তাঁর মেয়ের বিয়ের জন্য ১.৫ লক্ষ টাকা ও গয়না জমিয়ে রেখেছিলেন। দুষ্কৃতীরা তাঁর বাড়িও জ্বালিয়ে দেয়, সব লুট।
বিরোধী দলনেতা জানান,
“ওঁরা ওয়াকফ বোর্ডের কেউ নন। ওঁদের একটাই পরিচয়— ওঁরা হিন্দু। আর সেটাই ছিল ওঁদের ‘অপরাধ’। তাই আজ তাঁদের জীবন ছিন্নভিন্ন।”
তিনি কলকাতার আইসিসিআর সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে গণেশ ঘোষকে ৫ লক্ষ ও ছায়া সিংহকে ১.৫ লক্ষ টাকা সাহায্য প্রদান করেন ‘খোলা হাওয়া’ নামক অরাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে। তাঁর মন্তব্য—
“আমরা বরাবরই সনাতনী হিন্দুদের পাশে থেকেছি, এখনও আছি, ভবিষ্যতেও থাকব।”
শুভেন্দুর বার্তাগুলির মধ্যে দিয়ে এক দৃঢ় হুঁশিয়ারি উঠে আসছে—
- “হিন্দুরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হয়, তবে তারা নিজের দেশেই পরবাসী হয়ে যাবে।”
- “ধর্মনিরপেক্ষতার নামে যারা হিন্দু নিধনে যুক্ত, তাদের মুখোশ খুলে ফেলা এখন সময়ের দাবি।”
শুভেন্দুর এই মন্তব্য রাজ্যে ধর্মীয় রাজনীতির আবহে তীব্র আলোড়ন তুলেছে। তাঁর বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সতর্কতাও বটে।