নবান্ন অভিযানে উত্তাল রাজনীতি: কেন্দ্রবিন্দুতে শুভেন্দু অধিকারী
২১ এপ্রিল ফের হতে চলেছে নবান্ন অভিযান, আর সেই অভিযানের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। 'পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ', যারা অতীতে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে নবান্ন অভিযান চালিয়েছিল, এবার চাকরিহারাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ফের পথে নামতে চলেছে। এই অভিযান ঘিরে রাজ্যের রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক এবং টানটান উত্তেজনা।
চাকরি হারানো এবং মহার্ঘভাতা (DA) না পাওয়া চাকরিপ্রার্থীরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত চাকরিহারাদের সঙ্গে দেখা করা। এই দাবিকে সামনে রেখেই ১২টি সংগঠন ২১ এপ্রিল নবান্ন অভিযান ঘোষণা করেছে। এর পেছনে যে রাজনৈতিক ছায়া রয়েছে, তা আর অজানা নয়।
এই অভিযানে শুভেন্দু অধিকারীকে পাশে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। তিনি শুধু তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেননি, বরং 'পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ' ও 'সংগ্রামী যৌথমঞ্চ'-সহ একাধিক আন্দোলনকারী সংগঠন তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অভিযানে যোগ দেওয়ার কথা জানায়।
শুভেন্দুর ভূমিকা আরও স্পষ্ট হয় যখন তিনি ঘোষণা করেন, “যদি ১৫ এপ্রিলের মধ্যে রাজ্য সরকার যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা সুপ্রিম কোর্টে জমা না দেয়, তাহলে বিজেপি বিধায়কেরা পতাকা ছাড়া নবান্ন অভিযান করবেন।” পাশাপাশি তিনি চাকরিহারাদের আইনি লড়াইয়ের জন্য বিজেপি পরিষদীয় দলের তরফে আইনজীবীর খরচ বহনের প্রতিশ্রুতিও দেন।
শুভেন্দু অভিযোগ করেন, রাজ্য সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সুপ্রিম কোর্টে যোগ্যদের তালিকা জমা দেয়নি। তাঁর কথায়, “যদি সত্যিই যোগ্যদের তালিকা তৈরি থাকে, তবে তা আদালতে জমা দেওয়া হল না কেন?” তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে কটাক্ষ করে বলেন, “আপনি তো নিজেকে আইনজীবী বলেন, তাহলে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে যোগ্যদের হয়ে সওয়াল করুন।”
দুর্নীতির মূল হোতা।
শুভেন্দুর দাবি, রাজ্য সরকার এবং তৃণমূল নেতৃবৃন্দ এই দুর্নীতির মূল হোতা। তিনি বলেন, “চাকরি বিক্রি করে দল ও দলের ভাইপো বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছে। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের অডিও রেকর্ডে ৭৩ বার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম এসেছে, যা সিবিআই-এর চার্জশিটেও রয়েছে।”
এছাড়াও শুভেন্দু মনে করিয়ে দেন, ২০২২ সালে বিচারপতি (বর্তমানে বিজেপি সাংসদ) অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রায় পাঁচ হাজার 'অযোগ্য' প্রার্থীর চাকরি বাতিল করেছিলেন। সেই রায় মেনে না নিয়ে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে ২০০ কোটি টাকা খরচ করেছে – যার ফল ভোগ করছেন আজকের ‘যোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীরা।
“আমি কিছু জানতাম না”
তাঁর মতে, মুখ্যমন্ত্রীর “আমি কিছু জানতাম না” বক্তব্য নিছক নাটক। সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি – তিন দলের নেতারাই একযোগে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
শুভেন্দুর আরেকটি বড় অভিযোগ ওএমআর শিট পুড়িয়ে দেওয়া নিয়ে। তিনি বলেন, সিবিআই এবং বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টাতেই সেই শিটগুলি উদ্ধার হয়েছে। তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট – “চক্রান্তের জাল এতটাই গভীর যে সত্য প্রকাশে কেন্দ্রীয় সংস্থার হস্তক্ষেপ ছাড়া উপায় ছিল না।”
শুভেন্দু অধিকারী এই আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছেন
সব মিলিয়ে, শুভেন্দু অধিকারী এই আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছেন। ছাত্র, চাকরিপ্রার্থী, ও সরকারি কর্মচারী – একাধিক স্তরের মানুষ তাঁর নেতৃত্বে রাজপথে নামতে প্রস্তুত। তাঁর কণ্ঠে উঠে এসেছে প্রতিবাদের ঝাঁজ, আর রাজ্যের রাজনীতিতে জ্বলছে উত্তাপ।
২১ এপ্রিলের নবান্ন অভিযান তাই আর শুধু একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি নয় – এটি হয়ে উঠেছে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে এক রাজনৈতিক মহারণের সূচনা।