পয়লা বৈশাখ ২০২৫: বাংলা নববর্ষের আনন্দ, আচার ও ঐতিহ্যের এক মহোৎসব
প্রতিবেদন: মানুষের ভাষা
বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ, বাঙালি জীবনে কেবল একটি তারিখ নয়—এটি এক নতুন সূচনা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং আত্মপরিচয়ের প্রতীক। ২০২৫ সালে পয়লা বৈশাখ উদযাপিত হবে ১৫ এপ্রিল, মঙ্গলবার। এই দিনটির গুরুত্ব ধর্ম, সংস্কৃতি এবং সমাজজীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে।
ইতিহাস ও উৎপত্তি
পয়লা বৈশাখের সূচনা হয়েছিল মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে, যখন বাংলা সনের প্রবর্তন করা হয় কৃষি ও কর ব্যবস্থাকে সহজ করতে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত রূপ নেয় বাঙালির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসবে। এটি এখন বাঙালি জাতির পরিচয়, সংস্কৃতি এবং ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
নববর্ষ মানেই শুভ সূচনা
এই দিনটিতে বাঙালিরা নতুন পোশাক পরেন, বাড়িঘর পরিষ্কার করেন এবং নতুন বছরে শান্তি ও সমৃদ্ধির কামনায় পূজা করেন। বিশেষ করে লক্ষ্মী এবং গণেশ পূজা এই দিনের অন্যতম ধর্মীয় রীতি। বাঙালি হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, এই পূজার মাধ্যমে নতুন বছর ভাগ্য ও ধন-সম্পদে ভরে উঠবে।
পূজার আগে নতুন হিসাব খাতা—হালখাতা—খুলে, তাতে স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে পূজা করা হয়। দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করে এবং পুরোনো দেনা-পাওনা মিটিয়ে নতুন হিসাবের সূচনা করে। এটি শুধু ব্যবসার রীতি নয়, বরং আত্মশুদ্ধি ও নতুন আশার প্রতীক।
পূজার শুভ মুহূর্ত
দৃক পঞ্চাং অনুযায়ী, বাংলা ১৪৩২ সালের পয়লা বৈশাখ পড়েছে ১৫ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার। তবে সংক্রান্তির মুহূর্ত হবে ১৪ এপ্রিল, সোমবার সকাল ৩:৩৫ মিনিটে। এই সময়ের পরই পূজা ও শুভ কাজ শুরু করা শ্রেয় বলে মনে করা হয়। সেই অনুযায়ী, ব্যবসায়িক ও পারিবারিক শুভ সূচনার জন্য এই সময়ের পরে লক্ষ্মী-গণেশ পূজা করা শ্রেয়।
উৎসব ও উদযাপন
পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ, ত্রিপুরা এবং আসামের বারাক উপত্যকায় এই দিনটি নানা রঙ ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনে পরিণত হয়। পয়লা বৈশাখ উদযাপন করা হয়:
- রঙিন শোভাযাত্রা ও মিছিল
- লোকগান ও রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনা
- স্থানীয় মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
- পরিবারের সঙ্গে মিলনমেলা ও ভোজনপর্ব
- "শুভ নববর্ষ" শুভেচ্ছা বিনিময়
লোকজন ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। শহর জুড়ে হয় উৎসবমুখর পরিবেশ।
পয়লা বৈশাখের বিশেষ খাবার
এই দিন বাঙালির পাতে থাকে ঐতিহ্যবাহী খাবারের বাহার—ইলিশ মাছ, পোলাও, মিষ্টি দই, সন্দেশ ইত্যাদি। রেস্তোরাঁ ও ঘরোয়া রান্নাঘরে এক ভোজন উৎসবের আবহ সৃষ্টি হয়।
পয়লা বৈশাখ কেবল বাংলা বছরের প্রথম দিন নয়, এটি আশার আলো, ঐতিহ্যের উৎসব এবং একটি নতুন পথচলার প্রতীক। ধর্ম, সংস্কৃতি এবং আনন্দ—সবকিছুকে একসূত্রে বেঁধে দেয় এই দিনটি। লক্ষ্মী-গণেশ পূজা, হালখাতা, ভোজন-উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান—সব মিলিয়ে পয়লা বৈশাখ বাঙালি জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এই
নববর্ষে আসুন, আমরা সকলে পুরোনো গ্লানি দূরে সরিয়ে শুভ চিন্তায়, ভালোবাসায় এবং ঐক্যে উজ্জীবিত হই।
শুভ নববর্ষ ১৪৩২!