মুর্শিদাবাদ অশান্তি ও এসএসসি দুর্নীতির প্রতিবাদে বিজেপির বিশাল প্রতিবাদ মিছিল
“হিন্দু হত্যাকারী সরকারকে এবার বিদায় দিন”: মুর্শিদাবাদ অশান্তি ও এসএসসি দুর্নীতি ইস্যুতে শুভেন্দু অধিকারীর বিস্ফোরক অভিযোগ
“মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার হিন্দু বিরোধী ও দুর্নীতিতে ডুবে”: কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত বিজেপির বিক্ষোভ মিছিল
কলকাতা, ১১ এপ্রিল — মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক অশান্তি ও এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্যে রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন।
পশ্চিমবঙ্গে যোগ্যরা চাকরিহারা আর হিন্দুরা বাস্তুহারা !!!
— Suvendu Adhikari (@SuvenduWB) April 13, 2025
মুর্শিদাবাদ জেলায় সাম্প্রতিক অশান্তি বা দাঙ্গার ঘটনাগুলো রাজ্য পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এই নির্দেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মমতা… pic.twitter.com/KTkXgKIaWd
সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে শয়ে শয়ে হিন্দু পরিবার জেহাদি আতঙ্কে ঘরছাড়া হয়ে মালদহে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। বাংলার হিন্দুরা আজ নিজেদের দেশেই উদ্বাস্তু!”
তিনি আরও দাবি করেন, মুর্শিদাবাদের অশান্তি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্ট বাধ্য হয়েই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে, যা প্রমাণ করে যে রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর 'সাংবাদিক নীরবতা', রাজ্য সরকারের তোষণনীতি এবং জেহাদি সন্ত্রাস
শুভেন্দুর অভিযোগ, “তৃণমূল সরকার মুর্শিদাবাদের মতো সংবেদনশীল জেলাগুলিতে নিরপেক্ষ না থেকে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের তোষণে ব্যস্ত। পুলিশও নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর লাগাতার আক্রমণ হলেও রাজ্য প্রশাসন কোনও কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না?
“এসএসসি দুর্নীতির মূলচক্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে” — শুভেন্দুর দাবি
শুধু সাম্প্রদায়িক অশান্তি নয়, শুভেন্দু অধিকারী আরও অভিযোগ করেন যে ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল হয়েছে। তিনি বলেন, “মেধা তালিকায় জালিয়াতি, ওএমআর শিটে কারচুপি, ঘুষের বিনিময়ে চাকরি—সবটাই তৃণমূল সরকারের আশীর্বাদে সম্ভব হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর এক আত্মীয়ও এই দুর্নীতির সুবিধাভোগী।”
তিনি আরও বলেন, “যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি না দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্তদের রক্ষা করাই সরকারের উদ্দেশ্য ছিল। আদালতের নির্দেশ মেনেও তালিকা আলাদা করেনি সরকার।”
“চাকরি চোর ও হিন্দু হত্যাকারী সরকারের মুখ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে”: শুভেন্দু অধিকারী
এই সমস্ত ঘটনার প্রতিবাদে আজ কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত বিজেপির বিশাল প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেন শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা করেন,
“বাংলার মানুষ এবার বুঝে গেছেন, চাকরি চোর এবং হিন্দু হত্যাকারী সরকারকে আর রাখা যায় না। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর কোনও নৈতিক অধিকার নেই—তাঁর পদত্যাগ করা উচিত।”
বিজেপির সামগ্রিক নেতৃত্ব রাজপথে একজোট: দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার, রাহুল সিনহা ও রুদ্রনীল ঘোষের হুঁশিয়ারি
শুধু শুভেন্দু অধিকারী নন, রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বও আজকের প্রতিবাদ মিছিলে একসঙ্গে রাজপথে নামেন।
রাজ্য সভাপতি ডঃ সুকান্ত মজুমদার, জাতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ, প্রবীণ নেতা রাহুল সিনহা এবং অভিনেতা থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া রুদ্রনীল ঘোষ—সকলেই এই মিছিলে অংশগ্রহণ করে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত ও হিন্দুবিরোধী সরকার’-এর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন।
দিলীপ ঘোষ সাংবাদিকদের সামনে বলেন,
Bengal BJP leader Dilip Ghosh:
— News Arena India (@NewsArenaIndia) April 11, 2025
"A conspiracy is underway to make Malda, Murshidabad, Dinajpur, Nadia, Birbhum, Howrah districts free of Hindu population.
People from Bangladesh are coming here and causing chaos.
Hindu community is being attacked again and again." pic.twitter.com/bnewDAffxJ
“এই সরকার শুধু দুর্নীতিগ্রস্ত নয়, বরং হিন্দুদের উপর আক্রমণকারীদের রক্ষা করছে। রাজ্য এখন আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের দিকে এগোচ্ছে, যেখানে হিন্দুরা সুরক্ষিত নয়।”
বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন,
“বিজেপি বাংলার জনগণের সঙ্গে আছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ ও শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবে।”
রাহুল সিনহা অভিযোগ করেন,
“সরকার কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করলেও বাস্তব বলছে অন্য কথা। আদালতের হস্তক্ষেপ না থাকলে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেত না।”
রুদ্রনীল ঘোষ বলেন,
“শুধু রাজনৈতিক নেতা নয়, বাংলার সাধারণ মানুষ আজ প্রতিবাদে শামিল। আমরা এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে একজোট। বাংলাকে বাঁচাতে হলে, এই সরকারকে বিদায় জানাতেই হবে।”
বিজেপির ঐক্যবদ্ধ বার্তা: “বাংলা বাঁচাও, গণতন্ত্র বাঁচাও”
কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত দীর্ঘ মিছিলে জনস্রোত প্রমাণ করে দেয়, বিজেপি নেতৃত্ব মমতা সরকারের বিরুদ্ধে এবার এক সুসংগঠিত আন্দোলনের পথে। একযোগে সকল বিজেপি নেতা ঘোষণা করেন—
“বাংলার মানুষ আজ বুঝে গেছেন, দুর্নীতি ও তোষণের রাজনীতির আর প্রয়োজন নেই। হিন্দুদের নিরাপত্তা ও যোগ্যদের চাকরি ফেরাতে এই সরকারকে সরে যেতেই হবে।”