স্বাধীনতার শপথ
Manusher Bhasha Editorial-
রিনি রায় চৌধুরী
আজ
আমাদের স্বাধীনতার ৭৮ বছর । এই বছরের মতো নিঃশব্দ স্বাধীনতা দিবস আমি আগে কখনো দেখিনি
। অনেক প্রশ্ন মনে ঘোরাফেরা করছে । বেশ কয়েক রাত ঘুম হয়না ।২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের
অবসান ঘটাতে ছেলে-মেয়ে সমান ভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। তারা যেমন ছেলেদের নৃশংস ভাবে মেরে
ফেলতো, মেয়েদের ক্ষেত্রে সেটার সাথে ধ০র্ণের মতো আরো নির্মম অত্যাচার। আজ স্বাধীন ভারতের
পরিপ্রেক্ষিতে পুরুষ-নারী নির্বিশেষে , আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে নিজেদের উজ্জ্বল উপস্থিতি
প্রমান করছি। আচ্ছা একটা প্রশ্ন, NEET নামক যে সর্বভারতীয় পরীক্ষাটি হয়,তাতে কি মেয়েদের
জন্য কি সহজ প্রশ্ন আসে ?উত্তর হচ্ছে ,না !! যেদিন মেয়েটি জন্মেছিলো, সেদিন বাবা-মা
আনন্দে আত্মহারা হয়েছিল, আর যেদিন সে জীবনের কঠিনতম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ডাক্তার হয়েছিল,সেদিন বাবা-মা
,আত্মীয়পরিজন নিশ্চই ভীষণ খুশি হয়েছিল। মেয়েটি ডাক্তার হল। শহরের সবচেয়ে নামকরা ডাক্তারি
প্রতিষ্ঠান গুলোর একটিতে PG পড়তে গেলো। কত
স্বপ্ন চোখে। আর সেই চোখ থেকেই ঝরলো রক্ত। বলা হল,"৩৬ ঘন্টা ডিউটি করার পর সে
কেন একা সেমিনার রুম এ ঘুমাতে গিয়েছিলো?"এতদিন এতকিছু পরে বুঝলাম , সেমিনার রুমটি
কোনো অন্ধকার কুঠুরি নয়,একটি উন্মুক্ত জায়গা যেখান থেকে বাইরে কোনো আওয়াজ যায়না এমন
নয়। যেখানে রুগীরা যখন-তখন ডাক্তার এর সাথে যোগাযোগ করতে পারে।হায়রে,কিছু সুযোগসন্ধ্যানী
কাপুরুষ , পরিকল্পনা করেছিল তাকে মারার জন্য । শুধুমাত্র মেরেই ক্ষান্ত হলো না, সেই
আদিম, অকৃত্রিম, পাশবিক লালসা মিটিয়ে নিলো।
আজকাল
প্রতিটি পরিবারেই একটি করে সন্তান।হয় একটি মেয়ে অথবা একটি ছেলে। কোনো প্রয়োজনে মেয়েটি
যদি বাইরে বেরোলে বাবা-মা আশঙ্কায় থাকবে? আমি দেখি আজকাল , সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টিউশনে মেয়ে সন্তানদের বাবা মায়েরা নিয়ে যায় ।এই আশঙ্কা
থেকেই।
একটি
ডিউটিরত ডাক্তারকে এই চরম নৃশংস ,পাশবিক-বর্বরতার
শিকার হতে হবে ভাবতেই পারছি না। তাও কোথায়? না শহরের ব্যস্ততম হসপিটাল গুলির
মধ্যে অন্যতম RG KAR মেডিকেল কলেজ এ ,যেখানে
দিন ও রাত সমান বলা হয়।
স্বাধীনতার
আগে অথবা স্বাধীন ভারতে নারী - পুরুষ, উভয়-উভয়ের পরিপূরক আর কাপুরুষেরা শ্বাপদের মতো
সুযোগ খুঁজে বেড়ায়। আচ্ছা, যারা মেয়েটিকে মারলো
,তাদের বাড়িতে তার মা,বোন,প্রেমিকা কেউ নিশ্চই
আছে ,তাদের মনে হচ্ছে না এই মেয়েটির যন্ত্রণার কথা?
সেদিন
রাতে মেয়েটি অনেক চেষ্টা করেও প্রতিরোধ করতে পারেনি কিন্তু, হাজার-লক্ষ কণ্ঠসেই প্রতিবাদে
গর্জে উঠছে ।
এই
স্বাধীনতা দিবস শুভেচ্ছা বিনিময়ের নয় ,শপথ নেওয়ার।
বিচার
চাই!!!!!